ইরানের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের জন্ম দিয়েছেন পানিজ ফারিউসেফি। দেশটির প্রথম নারী হিসেবে অর্কেস্ট্রা সংগীতে নির্দেশনা দিয়ে তিনি অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। তার এই উপস্থিতি শুধু সংগীতাঙ্গনেই নয়, রক্ষণশীল ইসলামি প্রজাতন্ত্রে নারীদের পেশাগত ও সাংস্কৃতিক জীবনে নতুন দিগন্তের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
গত বুধবার তেহরানের খ্যাতনামা ওয়াহদাত হলে দর্শকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন এক নারী। কারণ, সেদিন একজন নারী তেহরানের একটি অর্কেস্ট্রা দল পরিচালনা করছিলেন। ইরানের মতো দেশে একটা সময় এমন দৃশ্য কল্পনাও করা যেত না।
বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানে নারীদের জনসম্মুখে পারফরম্যান্স, বিশেষত পুরুষ-নারী মিশ্র দর্শকের সামনে উপস্থাপনা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। এ দেশটিতে নারীরা পুরুষদের সামনে গানও গাইতে পারেন না। তবে ৪২ বছর বয়সী পানিজ ফারিউসেফি দেখিয়ে দিয়েছেন, বর্তমানে অর্কেস্ট্রা পরিচালনায় নারীদের কোনো আনুষ্ঠানিক নিষেধ নেই।
তিনি বলেন, মঞ্চে ওঠার পর বুঝলাম, সবার নজর আমার দিকে। মনে হচ্ছিল, আমার ওপর অনেক বড় দায়িত্ব।
অবশ্য অর্কেস্ট্রা সংগীতে নির্দেশনা দিলেও ইরানের আইন মেনে হিজাব পরিধান করেই মঞ্চে উঠেছিলেন ফারিউসেফি। হলে উপস্থিত দর্শকরা, বিশেষ করে তরুণীরা, ফারিউসেফির এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের উচ্ছ্বাস ভাগ করে নেন। তারা বুঝতে পারছিলেন যে, তারা ইতিহাসের সাক্ষী হচ্ছেন।কনসার্টের দর্শকদের মধ্যে কয়েকজন নারী মাথা খোলা রাখেন।
তেহরানসহ ইরানের অনেক শহরেই নারীরা মঞ্চে পারফর্ম করার সুযোগ পান না। রাজধানীতেও নারীরা গান গাইতে পারেন না প্রকাশ্যে। এমন বাস্তবতায় ফারিউসেফির মঞ্চে ওঠা অনেক তরুণীর চোখে ইতিহাসের মুহূর্ত হয়ে ওঠে।
শিল্পী পরিবারে জন্ম নেওয়া ফারিউসেফির মাও স্বপ্ন দেখতেন তার মেয়ে একজন চেফ ডি’অর্কেস্ট্র বা অর্কেস্ট্রা সংগীত নির্দেশক হবেন। তাই কিছুদিন আর্মেনিয়ায় প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে নিজের পথ তৈরি করেন।
৪৪ বছর বয়সী হেয়ারড্রেসার ফরিবা আঘাই বলেন, একজন নারী সংগীত পরিচালককে দেখে তিনি উচ্ছ্বসিত। তবে তিনি আফসোস করেন, নারীরা এখনো গান গাইতে পারেন না বা নিজেদের গান প্রকাশ করতে পারেন না।
২০২২ সালে হিজাববিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ হেফাজতে মাসা আমিনির মৃত্যু ঘিরে ইরানজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সেই অস্থিরতার পর সরকার কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করে। এরপরই ইরানের নারীরা সামাজিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রগুলোতে আরও বেশি দৃশ্যমান হয়ে ওঠেন।
চলতি বছরের শুরুর দিকে ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘাতের পর সামাজিক পরিসরে কিছুটা ছাড় আরও বাড়ে। স্থানীয়দের মতে, সরকার সামান্য সহনশীলতা দেখালেও রাজনৈতিক ভিন্নমত দমনে কঠোরতা একটুও কমেনি।
বিডি প্রতিদিন/কামাল