রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে নানামুখী প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা। শিক্ষার্থীদের চাওয়া-পাওয়া প্রাধান্য দিয়েই ঘোষণা করছেন ইশতেহার। গত কয়েক দিনে অভিনব প্রচারণা চালিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছেন পাঁচ ভিপি পদপ্রার্থী। তারা হলেন শিবির সমর্থিত প্যানেল সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ, ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্মের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর, ছাত্র ফেডারেশন ও ছাত্র অধিকার পরিষদ সমর্থিত প্যালেন রাকসু ফর রেডিক্যাল চেঞ্জ, গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট সমর্থিত প্যানেল গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদের ভিপি প্রার্থী ফুয়াদ রাতুল এবং সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী তাসিন খান। এদিকে রাকসু নির্বাচনে ভোটের মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন নারী প্রার্থীরা। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে শীর্ষ তিন পদ ভিপি, জিএস, এজিএস পদে লড়ছেন সাত নারী। এর মধ্যে ভিপি পদে আছেন তাসিন খান; জিএস পদে আফরিন জাহান, আছিয়া খাতুন, নুসরাত জাহান নূপুর ও পরমা পারমিতা এবং এজিএস পদে জাহিন বিশ্বাস এষা ও জান্নাত আরা নওশীন।
রাকসু নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদ, সিনেট প্রতিনিধি ও হল সংসদে ভোটার ২৮ হাজার ৯০১ জন। এর মধ্যে ছাত্র ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬ জন এবং ছাত্রী ১১ হাজার ৩০৫ জন। শতাংশের হিসেবে ছাত্রী ভোটার সংখ্যা ৩৯ দশমিক ১১ শতাংশ এবং ছাত্র ভোটার ৬০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। ভোটারদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ অনাবাসিক। এই ভোটারদের মাথায় রেখে নিজেদের আলাদা আলাদা কৌশল সাজাচ্ছে প্যানেলগুলো।
শিবির প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মতামতের ভিত্তিতে ইশতেহার তৈরি করেছি। এতে খাবারের মান উন্নয়ন, আবাসিক সংকট নিরসনসহ শিক্ষা ও গবেষণার মান উন্নয়নে কাজ করব। ছোট-বড় সব সমস্যা সমাধানের রোডম্যাপ প্রশাসনের কাছ থেকে আদায় করে নেব।’ শিক্ষা ও গবেষণা সংস্কারে গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচনি ইশতেহার দিয়েছে সর্বজনীন শিক্ষার্থী পরিষদ। এ পরিষদের ভিপি প্রার্থী তাসিন খান বলেন, ‘আমরা দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে ওঠার স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি। কিন্তু অধিকাংশের স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়। আমরা শিক্ষাব্যবস্থা ও কর্মসংস্থানে মাঝের দূরত্ব ঘুঁচিয়ে শিক্ষার্থীদের সেই স্বপ্ন পূরণে কাজ করব। প্রশাসন থেকে একটি যুগোপযোগী অ্যাকাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান আদায় করে নেব।’ আর ছাত্রদল প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর বলেন, ‘আমরা নির্বাচিত হই বা না হই, সবার জন্য একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।’
এদিকে, রাকসু ও সিনেট নির্বাচনে নারী প্রার্থীদের অভূতপূর্ব অংশগ্রহণে এবার ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। কেন্দ্রীয় সংসদ ও সিনেট মিলিয়ে মোট ১৯টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩২ জন ছাত্রী। অন্যদিকে ছাত্রী হলগুলোতে ১৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন ২১৭ জন নারী। রাকসু নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, এবারের নির্বাচনকে ধরা হচ্ছে রাকসুর ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রার্থীর অংশগ্রহণ হিসেবে। কেন্দ্রীয় সংসদ ও সিনেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ৩২০ জন প্রার্থী, আর হল সংসদে রয়েছেন ৭৫৪ জন। এর মধ্যে ২৮৮ জন ছাত্র আর ৩২ জন ছাত্রী। উল্লেখ্য, রাকসুর ৬৩ বছরের ইতিহাসে কখনো কোনো নারী ভিপি নির্বাচিত হননি। জিএস এবং এজিএস পদেও নারীদের প্রার্থিতা বা জয়ের নজির খুব সীমিত। তবে এবার শীর্ষ তিন পদেই নারী প্রার্থীদের উপস্থিতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন প্রত্যাশা তৈরি করেছে। ভিপি পদে একমাত্র নারী প্রার্থী তাসিন খান বলেন, ‘জুলাই গণ অভ্যুত্থানে নারী শিক্ষার্থীরা সম্মুখ সারিতে ছিলেন।
তাদের ভোটের শক্তি ও নেতৃত্বের যোগ্যতা আছে। এবারের নির্বাচনে নারীর সর্বোচ্চ প্রতিনিধিত্ব আমরা দেখতে পাব বলেই আশা করি।’ জিএস প্রার্থী আছিয়া খাতুন বলেন, ‘এবার নারীর অংশগ্রহণ তুলনামূলক অনেক কম। আরও বেশি প্রার্থী হলে ভালো লাগত।’