ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এবার ৯ লাখ ২৫ হাজার ৬০৫ জন ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে নির্বাচন কমিশন। এ ক্ষেত্রে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সংসদ নির্বাচন আয়োজনে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু হতে পারে। তফসিল ঘোষণার তিন থেকে সাড়ে তিন মাস আগে থেকেই কোর ও প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করতে হয়। এবার ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করবে নির্বাচন কমিশন। এতে ৩ হাজার ৬০০ জন কর্মকর্তা প্রশিক্ষক হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবে। নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ ভোট প্রস্তুতির বিষয়ে ইতোমধ্যে বলেছেন, প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে শুরু হয়েছে ছোট পরিসরে। এরপর ধাপে ধাপে প্রয়োজনীয় সংখ্যক টিওটির কাজ শেষ হবে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও নির্বাচন পরিচালনা বিধির সংশোধন কাজ দ্রুত শেষ করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠালে সে অনুযায়ী ম্যানুয়েল, নির্দেশিকা মুদ্রণের কাজ শুরু হবে। যা প্রশিক্ষণের কাজে নিয়ামক হিসেবে থাকবে।
এ বিষয়ে নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান বলেন, একজন নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত ও প্রশিক্ষণ তদারকি নিয়ে আমাদের বৈঠক হয়েছে। আগস্টের শেষে কোর প্রশিক্ষক ও সেপ্টেম্বরের শুরুতে টিওটি শুরু হবে। ধাপে ধাপে মাঠপর্যায়ে যথাসময়ে সব ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার প্রশিক্ষণের কর্মপরিকল্পনা রয়েছে। তিনি জানান, চূড়ান্ত ভোটার, ভোট কেন্দ্র ও ভোটকক্ষ নির্ধারণ হলেই ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের সংখ্যা নির্ধারণ হবে। ৯-১০ লাখ দাঁড়াতে পারে এ সংখ্যা।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, প্রতি কেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা একজন, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা দুজন এবং ভোটকক্ষ প্রতি দুজন পোলিং অফিসার মিলিয়ে কেন্দ্র প্রতি ৮/১০ জনের মতো পোলিং অফিসার প্রয়োজন হয়। অতিরিক্ত লোকবল প্রস্তুত রাখতে হয়। সব মিলিয়ে ৯ লাখেরও বেশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার জন্য প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগে যত সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষকের প্রয়োজন হবে, তার চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি লোকবল বাছাই করে প্যানেল প্রস্তুত করতে হয়।
সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা (প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার) নিয়োগের প্যানেল প্রস্তুত ও অন্যান্য দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন অফিস/প্রতিষ্ঠান থেকে জরুরি ভিত্তিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীর তালিকা সংগ্রহ করার জন্য তফসিল ঘোষণার ইসি সচিবালয় মাস দেড়েক আগে মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা পাঠায়। এ নির্বাচনে মোট ৪৪ হাজার ৯৩৪টি ভোট কেন্দ্র এবং ২ লাখ ৭৮ হাজার ৮৬৫টি ভোটকক্ষ লাগতে পারে। এর মধ্যে সম্ভাব্য ২ হাজার ৭৮৬টি অতিরিক্ত ভোট কেন্দ্র ও ১৭ হাজার ৩০১টি অতিরিক্ত ভোটকক্ষ হতে পারে। কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনে প্রয়োজন হতে পারে প্রায় ৮ লাখ ৮১ হাজার ৫২৯ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা। আগের নির্বাচনের মতো প্রয়োজনের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি কর্মকর্তা প্যানেলভুক্ত করা হয় এবং ৫ শতাংশ অতিরিক্ত কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে এবার ৯ লাখ ২৫ হাজারের বেশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সবশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রায় ১২ কোটি ভোটারের বিপরীতে ৪২,১৪৮ টি ভোট কেন্দ্র ও ২,৬১,৫৬৪ টি ভোটকক্ষ ছিল।
তফসিলের আগে ও পরে বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, ডিআইজি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, রিটার্নিং অফিসার, ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক ও আইনশৃঙ্খলা কর্মকর্তা, নির্বাহী ও বিচারিক হাকিমসহ সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তাদের ঢাকায় নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রশিক্ষণ আয়োজন করবে। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটের জন্য ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসি।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, সে অনুযায়ী চলতি মাসের ২৯ ও ৩০ তারিখ নির্ধারিত কর্মকর্তাদের দেওয়া হবে কোর প্রশিক্ষণ। এতে ইসি সচিবালয়ের নিজস্ব কর্মকর্তা অংশ নেবেন- যা দুটি ব্যাচে দুই দিনব্যাপী হবে। এরপর পয়লা সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। যেখানে ইসির মাঠপর্যায়ের ও অন্যান্য বিভাগের সম্ভাব্য ৩ হাজার ৬০০ জন কর্মকর্তাকে ১৪০-১৫০টি ব্যাচে ২ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ভোট সামনে রেখে দ্রুত ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত ও প্রবাসীদের ভোটদানে অংশগ্রহণের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে কাজ করছে ইসি। এক্ষেত্রে আগের নির্বাচনে (২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে) ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের তথ্যও অন্তর্ভুক্ত রাখবে সংস্থাটি।