ঢাকার বাইরে বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহীতে বাড়ছে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা। চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৮৭০ জন, এর মধ্যে শুধু বরিশাল বিভাগেই আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৯৮৪ জন। বরগুনায় আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৫০০ ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির (বিএমইউ) মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবেদ হোসেন খান বলেন, দেশে এ মুহূর্তে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ সংক্রমণ হচ্ছে বরিশাল ও বরগুনা এলাকায়। চলতি সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডেন-১, ডেন-২ এবং ডেন-৩ সেরোটাইপ সক্রিয় পাওয়া গেছে।
অপরিকল্পিত নগরায়ণ, মশা নিয়ন্ত্রণে অব্যবস্থাপনা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ডেঙ্গু সংক্রমণ বৃদ্ধির মূল কারণ। আগে ডেঙ্গু ঢাকা কেন্দ্রিক থাকলেও এখন সারা দেশেই ডেঙ্গুর বিস্তার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ ছাড়া ১৬-২৫ বছর বয়সি তরুণদের মধ্যেও সংক্রমণের হার বাড়ছে, যা অতীতে তুলনামূলক কম ছিল।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৩২৬ জন, মারা গেছেন দুজন। আক্রান্তদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১১৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৩ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৩ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৬ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৫ জন, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৬ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) পাঁচজন, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২৯ জন, সিলেট বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) একজন। গতকাল ডেঙ্গু জ্বরে প্রাণ হারানো দুজনের মধ্যে একজন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা। চলতি বছর ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৩৬ জন। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৮৭০ জন। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৯৮৪, মারা গেছেন আটজন। উপকূলীয় জেলা বরগুনায় জরিপ চালিয়ে রোগটির ডেন-৩ ভ্যারিয়েন্টের আধিক্য ধরা পড়েছে। জেলাটিতে ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে ৪৬ শতাংশই ডেন-৩ আক্রান্ত। সীমিতসংখ্যক নমুনা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পেয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন।
ডেন-৩ হলো ডেঙ্গু ভাইরাসের একটি প্রকার বা ভ্যারিয়েন্ট। এটি ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী চারটি প্রধান সেরোটাইপের মধ্যে একটি। ২০২৪ সালে রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগীদের ৮৫ শতাংশেরও বেশি ডেন-২ দিয়ে আক্রান্ত ছিলেন। ২০২৩ সালেও ডেন-২-এ আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল বেশি। সে বছর সীমিতসংখ্যক নমুনা বিশ্লেষণে ৬২ শতাংশ রোগীর ডেন-২ ধরন দেখা যায়। বাকি ৩৮ শতাংশ আক্রান্ত ছিলেন ডেন-৩-এ। আর ২০২২ সালে নমুনা বিশ্লেষণে প্রাধান্য ছিল ডেন-৩-এর। ৯০ শতাংশ রোগী আক্রান্ত হয়েছিল ডেন-৩-এ। বাকি প্রায় ১০ শতাংশ ছিল ডেন-৪। তবে এ বছর আবার ডেন-৩ এর প্রধান্য দেখা দিচ্ছে। ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, বরগুনায় ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ ডেন-৩ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ রোগী ডেন-২ তে আক্রান্ত হয়েছেন। বাকি ১৪ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছেন অন্য ধরন ডেন-২ ও ৩-তে। ৪৩টি অনুমান জিনোম পরীক্ষা করে এ তথ্য মিলেছে। তিনি জানান, বরগুনায় জুনের ১৬-২২ তারিখ পর্যন্ত জরিপ পরিচালনা করা হয়। ভর্তি রোগীদের মধ্যে বরগুনা সদরে ডেঙ্গু আক্রান্ত বেশি, এরপর পাথরঘাটায়। কম রোগী ছিল আমতলী আর বেতাগী উপজেলায়। বরগুনায় ডেঙ্গুর চিত্র কতটা ভয়াবহ তা এখনই বলা যাচ্ছে না বলে জানান ডা. তাহমিনা শিরিন। তিনি বলেন, এটি বুঝতে আরও সময় লাগবে। এদিকে আমাদের বরগুনা প্রতিনিধি জানান, বরগুনায় বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গতকাল পর্যন্ত এ জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৫৬০ জন। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত ছয়জন মারা গেছেন। গতকাল বরগুনা সদর হাসপাতালে নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ৫৫ জন। জেলায় মোট ভর্তি হয়েছেন ৬৫ জন। নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী জানান, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তার নাম কবির হোসেন (৩৭)। বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলায়। গত মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। বুধবার সকালে হাসপাতালের ডেঙ্গু সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চলতি মৌসুমে মোট ৭৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৬৯ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বর্তমানে পাঁচজন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন।