বিদ্যুতের পাওনা নিয়ে বাংলাদেশ সরকার ও ভারতের আদানি পাওয়ার লিমিটেডের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) যেখানে পাওয়ার পার্চেস অ্যাগ্রিমেন্ট (পিপিএ) অনুযায়ী বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণ করতে চাইছে। সেখানে আদানি পাওয়ার চুক্তির ধারা না মেনে আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম, কয়লার দাহ্য ক্ষমতাসহ বিভিন্ন বিষয়কে সামনে রেখে নিজেদের মনমতো বাংলাদেশে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণ করছে। এতে এখন পর্যন্ত পিডিবির হিসাবে আদানির পাওনা ৫০০ মিলিয়ন ডলার। আদানি কর্তৃপক্ষ দাবি করছে ৯০০ মিলিয়ন ডলার। পিডিবির দায়িত্বশীল সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে, এটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো সমাধানে যাওয়া যাবে না। এটি নিয়ে এরই মধ্যে বৈঠক হয়েছে। এর ধারাবাহিক কার্যক্রম চলবে।
প্রসঙ্গত বাংলাদেশ সরকারের কাছে গত মে মাস পর্যন্ত ভারতের আদানি পাওয়ার লিমিটেডের বকেয়া পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। পিডিবির কাছে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাবদ আদানি পাওয়ার এ অর্থ দাবি করেছে। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে অনেক দিন ধরে পিডিবি আদানি প্রতি মাসে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে তার টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। এতে কিছু অর্থ বকেয়া থেকে যায়। জুন মাসের মধ্যে বকেয়ার বড় অংশ পরিশোধ না হলে পরের মাস থেকে এ কেন্দ্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন বজায় রাখা সম্ভব হবে না বলেও আদানি কর্তৃপক্ষ হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এমন হলে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্ন ঘটতে পারে। জানা যায়, গত ১৭ জুন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে লেখা এক চিঠিতে আদানি পাওয়ার তাদের বকেয়া পরিশোধের অনুরোধ জানিয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের কাছে বিপুল পরিমাণ অর্থ বকেয়া থাকায় ভারতের ঝাড়খন্ডের গড্ডায় স্থাপিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন অব্যাহত রাখা এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। পিডিবির কর্মকর্তারা জানান, এপ্রিল পর্যন্ত আমরা ৩৩৬ মিলিয়ন ডলার আদানিকে পরিশোধ করেছি। আদানি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের ওপরে অনেক বেশি বকেয়া দেখাচ্ছে। আমাদের হিসাব অনুযায়ী আদানি বাংলাদেশ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি পাওনা রয়েছে। পাওয়ার পার্চেস অ্যাগ্রিমেন্ট (পিপিএ) অনুযায়ী আদানির সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছিল তা একেবারে ধারা-উপধারা মেনে আমরা কাজ করছি। আর আদানি কর্তৃপক্ষ চুক্তির ধারা না মেনে ওদের মনমতো বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করছে। এজন্য দুই পক্ষের মধ্যে পার্থক্য হয়েছে। এ ব্যাপারে দুই পক্ষের হাইকমান্ডের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা হচ্ছে।
আদানি এনার্জি সলিউশনস লিমিটেড (এইএসএল) ও আদানি পাওয়ার লিমিটেডের (এপিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনিল সরদাসনা লিখিত এক চিঠিতে উল্লেখ করেন, বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও বৈদেশিক মুদ্রার অভাবের কথা বলে পিডিবি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ বকেয়া রেখেছে। ২০২৫ সালের মে মাসের শেষে এ বকেয়ার পরিমাণ ৯০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। যা তাদের ওপর মারাত্মক আর্থিক চাপ এবং ঋণদাতাদের সামনে বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। জানা যায়, পিডিবি নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রতি মাসে ৯০ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করছে। মূলত পিডিবি আদানির কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় বিদ্যুৎ কিনে তা বিক্রি করে স্থানীয় মুদ্রা বা টাকায়। এ ছাড়া আদানি পাওয়ার বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে যে, তারা বিদ্যুৎ রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়লার বিতর্কিত মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি পর্যালোচনা করতে প্রস্তুত। তবে এর আগে বাংলাদেশকে বকেয়া বিল পরিশোধ করতে হবে। গত ২৩ জুন পিডিবি ও আদানি পাওয়ারের কর্মকর্তাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এ বার্তা দেওয়া হয়েছে। পিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আদানির পাওনা বিষয়ে ওরা একটা হিসাব করছে আর আমরা একটা বলছি। এ বিষয়ে আলোচনা চলছে, এটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোনো সমাধানে যেতে পারব না। আমরা এখন যেভাবে আদানির পাওনা দিচ্ছি সেটা চালিয়ে যাব। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর ঠিক হবে কোনটি নির্ধারণ হবে। আর পাওনা পরিশোধ না হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্ন হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা তো ওরা বলেই যাচ্ছে। মাঝে গত অক্টোবরে একবার ঘটেছিল সেটা পরে ঠিক হয়ে যায়। কয়লার দাম নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে তা নিয়ে আদানি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাইনি।