দেশে প্রায় ৪ দশমিক ২৭ শতাংশ নারী জরায়ুমুখ ক্যানসারে (হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসে-এইচপিভি) আক্রান্ত। এইচপিভি শনাক্তে স্ক্রিনিং করা নারীদের মধ্যে প্রতি ১০০ জনের প্রায় পাঁচজন নারী যৌন সংক্রমিত এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হচ্ছেন।
গতকাল বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ‘ইলেকট্রনিক ডাটা ট্রাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং’ শীর্ষক কর্মসূচির ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক ও বিএমইউর গাইনি অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আশরাফুন্নেসা।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০২১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত মোট ৩৮ হাজার ১৮৩ জন নারীর এইচপিভি স্ক্রিনিং করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১ হাজার ৪৩১ জনের শরীরে ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, আর ৩৬ হাজার ৭৫২ জনের রিপোর্ট এসেছে নেগেটিভ। গড়ে প্রতি ১০০ জনে প্রায় চারজন নারী এইচপিভি ভাইরাসে আক্রান্ত। সালভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২১ সালে স্ক্রিনিং হয় তিন হাজার ৩১৯ জন নারীর, পজিটিভ ১০৯ (৩.২৮%), নেগেটিভ তিন হাজার ২১০ জনের। ২০২২ সালে স্ক্রিনিং করা হয় চার হাজর ৪৪৬ জনের, যেখানে পজিটিভ আসে ১৫৯ (৩.৫৭%), আর নেগেটিভ আসে চার হাজার ২৮৭ জনের। এরপর ২০২৩ সালে স্ক্রিনিং হয় ১৩ হাজার ৬৭৬ জনের, যাদের মধ্যে পজিটিভ ৪৮১ (৩.৫২%) এবং নেগেটিভ আসে ১৩ হাজার ১৯৫ জনের। সবচেয়ে বেশি এইচপিভি স্ক্রিনিং হয় ২০২৪ সালে ১২ হাজার ৩৩৭ জনের, যেখানে পজিটিভ আসে ৪৯৭ (৪.০৩%) এবং নেগেটিভ আসে ১১ হাজার ৮৪০ জনের। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত স্ক্রিনিং হয়েছে ৪ হাজার ৪০৫ জন নারীর, যেখানে পজিটিভ আসে ১৮৫ জন (৪.২০%) এবং নেগেটিভ ৪ হাজার ২২০ জনের।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এইচপিভি ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত করে যথাসময়ে চিকিৎসা নেওয়া গেলে জরায়ুমুখ ক্যান্সারে রূপ নেওয়ার আগেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ জন্য জাতীয় পর্যায়ে এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচি জোরদার করার পাশাপাশি ব্যাপক স্ক্রিনিং ও সচেতনতা কার্যক্রম চালানোর আহ্বান জানানো হয়। অধ্যাপক ডা. আশরাফুন্নেসা বলেন, ‘প্রতিবছর স্ক্রিনিংয়ের হার বাড়ছে, এটি একটি ইতিবাচক। কিন্তু এই ব্যবস্থা এখনো শহরকেন্দ্রিক। গ্রামীণ নারী জনগোষ্ঠীকে আমরা যতটা সম্ভব এই কার্যক্রমের আওতায় আনতে চাই। যেহেতু এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রাথমিকভাবে ধরা পড়লে ক্যান্সার প্রতিরোধ সম্ভব, তাই সরকারের পাশাপাশি সব শ্রেণির অংশগ্রহণ প্রয়োজন।’ বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলমের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিএমআরসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আশরাফী আহমদ প্রমুখ।