কয়লার মজুত বাড়াতে ভারতের এক্সিম ব্যাংকের কাছে ১১ কোটি ডলার ঋণ চায় বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল)। বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ বিনিয়োগে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। কয়লার মজুত প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, ফলে অব্যাহত বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে জরুরি ভিত্তিতে জ্বালানি আমদানির জন্য ঋণ চেয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ মালিকানাধীন এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনাকারী কোম্পানি এখন কয়লা আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলার উদ্দেশ্যে ভারতের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট (এক্সিম) ব্যাংক থেকে ১১ কোটি মার্কিন ডলারের কার্যকর মূলধন ঋণ চাচ্ছে। কোম্পানির চেয়ারম্যান ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান এক চিঠিতে ভারতের এক্সিম ব্যাংক থেকে কার্যকর মূলধন ঋণ নিশ্চিত করার জন্য অর্থ সচিবের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বাংলাদেশ সরকারের গ্যারান্টিতে স্থাপিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে ভারতের এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নের পরিমাণ ১৬০ কোটি ডলার। চিঠিতে মোখলেস উর রহমান লিখেছেন, ‘বিশেষ করে গ্রীষ্মের চাহিদার সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রাখতে পর্যাপ্ত কয়লার জোগান নিশ্চিত করা জরুরি।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, পর্যাপ্ত কয়লা সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা কার্যকর মূলধন প্রয়োজন। তবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির বর্তমানে কার্যকর মূলধন রয়েছে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এ অর্থ দিয়ে আগামী ৫ মে পর্যন্ত কয়লা সরবরাহ নিশ্চিত করা গেছে। তাই পরবর্তী সময়ের জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলা জরুরি হয়ে পড়েছে।
সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রা.) লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) নামে পরিচিত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এবং ভারতের এনটিপিসি লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিআইএফপিসিএল স্থানীয় ব্যাংকগুলোর কাছেও কার্যকর মূলধনের জন্য আবেদন করেছে, তবে প্রক্রিয়াগত বিলম্বের কারণে অর্থ পেতে ২-৩ মাস সময় লাগতে পারে, যা বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি করছে। এ কারণে বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছরের ২ এপ্রিল মুম্বাইয়ে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ১১ কোটি ডলারের কার্যকর মূলধন ঋণের আবেদন করেছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘যদিও ভারতের এক্সিম সাধারণত এ ধরনের ঋণ প্রদান করে না, তবে এটি পূর্বের অর্থায়ন মডেল অনুসরণ করে এবং বাংলাদেশ সরকারের সার্বভৌম গ্যারান্টির আওতায় পড়লে ব্যাংকটি বিবেচনা করতে পারে। ২০২৫ সালের জুন, সেপ্টেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসে মেয়াদি ঋণের কিস্তি পরিশোধে সক্ষম থাকতে এবং উৎপাদন অব্যাহত রাখতে এ ঋণটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, প্রস্তাবিত ঋণ আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে পরিশোধের পরিকল্পনা রয়েছে এবং যা ১৬০ কোটি ডলারের অনুমোদিত ঋণসীমার মধ্যেই থাকবে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের কার্যকর হস্তক্ষেপ চেয়েছে রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। বিআইএফপিসিএলের বোর্ড সদস্য এ এন এম ওবায়দুল্লাহ বলেন, অতীতে কয়লার সংকটে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ‘অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা’ গ্রহণ করে উৎপাদন চালিয়ে গেছে। তিনি বলেন, চুক্তিতে উল্লেখ আছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরবচ্ছিন্ন কার্যক্রমের জন্য কার্যকর মূলধন বজায় রাখতে হবে। আমরা কয়েকটি স্থানীয় ব্যাংক ও ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে কার্যকর মূলধনের জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।