বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পয়লা বৈশাখ বরণ করে নিতে উৎসবে মেতে উঠবে লাখ লাখ মানুষ। বর্ষবরণ অনুষ্ঠান ঘিরে ঢাকাসহ সারা দেশে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পোশাকে এবং সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করবেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ ছাড়া রমনার বটমূল ও আনন্দ শোভাযাত্রা ঘিরে থাকবে বাড়তি নিরাপত্তা। ডিএমপি কমিশনার বলেছেন, পয়লা বৈশাখে নিরাপত্তার কোনো হুমকি নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পয়লা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রমনা বটমূল ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনতার ঢল নামবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানগুলো সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। যে কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে প্রস্তুত থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাড়তি নিরাপত্তা হিসেবে রমনার বটমূল, আনন্দ শোভাযাত্রা, কূটনৈতিক এলাকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নজরদারি বাড়ানো হবে। বর্ষবরণ এলাকাগুলোতে সুপেয় পানি সরবরাহ, গাড়ি পার্কিং, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা, মেডিকেল টিম, পর্যাপ্ত আলো, মোবাইল টয়লেট ও ময়লা-আবর্জনা ফেলতে ভ্রাম্যমাণ ডাস্টবিন রাখা হবে। তাৎক্ষণিক কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসাসহ দ্রুত হাসপাতালে নিতে প্রস্তুত থাকবে অ্যাম্বুলেন্স। ইভ টিজিং বন্ধে সক্রিয় থাকবে সাদা পোশাকধারী পুলিশ-র্যাব। অগ্নিনির্বাপণে থাকবেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। থাকবে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলও।
এদিকে পয়লা বৈশাখ ঘিরে কোনো নিরাপত্তা হুমকি নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। তিনি বলেন, পয়লা বৈশাখ আনন্দঘন, উৎসবমুখর ও নিরাপদে উদযাপনের লক্ষ্যে মহানগরীকে ২১টি ভাগে ভাগ করে ডিএমপির পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গতকাল সকালে রাজধানী রমনার বটমূলে বর্ষবরণ ও পয়লা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে নিরাপত্তাব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিএমপিপ্রধান বলেন, গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও সাইবার প্যাট্রোলিংসহ নববর্ষ-কেন্দ্রিক অপপ্রচার রোধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে কোনো অপতৎপরতা মনিটরিং করা হবে। আপনাদের নিরাপত্তার স্বার্থে তল্লাশি কাজে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সহায়তা করতে নগরবাসীকে অনুরোধ করছি। অনুষ্ঠানস্থলে কোনো প্রকার মুখোশ, ব্যাগ, ধারালো বস্তু ও দাহ্য পদার্থ নিয়ে আসা যাবে না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে এবং অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করতে হবে। কোনো ধরনের ফানুস বা আতশবাজি ফোটানো যাবে না এবং শব্দদূষণ হয় এরকম কোনো বাঁশি ব্যবহার করা যাবে না।
এদিকে গতকাল সকালে নববর্ষ উৎসবে র্যাবের নিরাপত্তা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, নববর্ষ উপলক্ষে সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে সব ধরনের ব্যবস্থা রেখেছি আমরা। নববর্ষ উৎসবটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি। নববর্ষের উৎসবকে কেন্দ্র করে ইভ টিজিং যাতে না হয়, কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে, সেজন্য সতর্ক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বৈশাখী উৎসবকে ঘিরে অপপ্রচার রোধ করতে সাইবার নিরাপত্তাব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। র্যাবপ্রধান আরও বলেন, র্যাবের সব ব্যাটালিয়ন নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় ২২৪টি পিকআপ টহল, ১২২টি মোটরসাইকেল টহলসহ সর্বমোট ৩৪৬টি টহল ও সাদা পোশাকে ৪১৩ জনসহ সর্বমোট ২ হাজার ৪৪৯ জন র্যাব সদস্য মোতায়েন রাখা হয়েছে। যে কোনো নাশকতা মোকাবিলায় র্যাব স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডো টিমকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। অন্তর্র্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রত্যেকটি উৎসবে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছিল। দুর্গাপূজা, বিজয় দিবস, বড়দিন, ইংরেজি নববর্ষ, একুশে ফেব্রুয়ারি, সর্বশেষ রমজানের ঈদেও নিরাপত্তা নিয়ে কোনো আশঙ্কার সৃষ্টি হয়নি।