বৈসাবি উৎসবের রং লেগেছে পাহাড়ে। পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের বৈসাবি ঘিরে বর্ণিল সাজে সজ্জিত এখন পাহাড়। বসেছে আনন্দ-উল্লাস আর নাচগানের আসর। এ আমেজকে বাড়তি আনন্দ দিতে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের চত্বরে বসানো হয়েছে বৈসাবি মেলা। সপ্তাহব্যাপী এ মেলার আয়োজন থাকলেও উৎসব চলবে প্রায় অর্ধমাসব্যাপী।
গতকাল ছিল বৈসাবি মেলার পঞ্চম দিন। বিকাল ৪টায় শুরু হয় মেলার আনুষ্ঠানিকতা। ঐতিহ্যবাহী পোশাকে নানা রঙে ঢঙে সেজে মেলায় দলে দলে যোগ দিতে আসে ১০ ভাষাভাষী ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী। এ মেলায় চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও তঞ্চঙ্গ্যা তরুণ-তরুণীদের রংবেরঙের সাজ আনন্দ বাড়িয়েছে কয়েক গুণ। এ বৈসাবি মেলায় যোগ দিয়েছেন অন্য দুই পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের নৃ-গোষ্ঠীরা। তাদের নাচে গানে মাতোয়ারা মেলার দর্শনার্থীরা।
বৈসাবি মেলা ঘুরে দেখা যায়, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও তঞ্চঙ্গ্যা তরুণ-তরুণীরা মেতে উঠেছেন তাঁদের ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলায়। ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের গড়াই নৃত্য, তঞ্চঙ্গ্যা ঘিলা খেলা ও চাকমাদের ছিল বেম্ব খেলা। খেলা দেখতে মেলায় ভিড় জমে পাহাড়ি-বাঙালির। সব সম্প্রদায়ের সম্প্রীতির মেলবন্ধনে এক আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি হয় রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ইনস্টিটিউট চত্বরে। অন্যদিকে বেচাকেনা বেড়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ১৪৫টি স্টলে। দূরদূরান্ত থেকে আসছেন হাজারো দেশিবিদেশি পর্যটক। সন্ধ্যা নামলে স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙালির উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো। মেলাজুড়ে আছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের চিত্র। তাঁদের পরিধানে পোশাক, বস্ত্র, অলংকার, বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্য আর জীবনজীবিকার সব সরঞ্জাম; যা বর্তমানে কালের বিবর্তনে প্রায় বিলুপ্ত বললেই চলে। মেলায় কথা হয় নয়নতারা চাকমার সঙ্গে। বলেন, ‘বৈসাবি আসলে আমাদের উৎসব। নানা নামে, নানা আয়োজনে পালন করা হয় এ উৎসব। উৎসবে যোগ দিতে আমাদেরও ভালো লাগে। বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী, ধর্মবর্ণের নারী-পুরুষের সঙ্গে দেখা হয়। একটা মিলনমেলায় পরিণত হয়।’ উল্লেখ্য, বর্ষ বিদায় ও বরণ উপলক্ষে চৈত্রসংক্রান্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের ঘরে ঘরে পালন করা হয় বৈসাবি। এ উৎসব চাকমারা বিজু, মারমারা সাংগ্রাইং, ত্রিপুরারা বৈসু, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু এবং অহমিকারা বিহু বলে আখ্যায়িত করেন। চাকমা ভাষা ও রীতি অনুযায়ী ২৯ চৈত্র ফুল বিজু, ৩০ চৈত্র মূল বিজু ও ১ বৈশাখ গোজ্যাপোজ্যা ও সাংগ্রাই পালন করে থাকে।