বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণার গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে করা লিভ টু আপিল পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে ‘নির্বাচন কমিশনই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে’ বলে আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, যেসব প্রশ্ন উঠেছে তা নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক ম্যান্ডেটের মধ্যে পড়ে। কমিশনই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। আদালতের এ আদেশের পর ইশরাকের শপথ গ্রহণের কী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তারা আপিল বিভাগের আদেশের অনুলিপির অপেক্ষায় রয়েছে। এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার আদালত অবমাননা করেছে দাবি করে শপথ না পড়ালে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন ইশরাক হোসেন। গতকাল দুপুরে নগর ভবনে চলমান বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে এমন হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
গতকাল আদালতে লিভ টু আপিলকারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন। ইশরাকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. ইয়াসীন খান। আদেশের পর ইশরাকের আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, তারা (লিভ টু আপিলকারী) গেজেট স্থগিত চেয়েছিলেন, আদালত কোনো স্থগিতাদেশ দেননি। আদালত পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তারাই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে এবং তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। নির্বাচন কমিশন আপিল করার যুক্তি না থাকায় আপিল করবে না বলে আগেই জানিয়েছে। আজ (গতকাল) আদেশ হলো, আবেদনকারীকে লিভ (আপিলের অনুমতি) দেননি, কোনো স্থগিতাদেশ দেননি। নিষ্পত্তি করে বলেছেন ইসির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। এখন নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। সিদ্ধান্তের আলোকে সরকার শপথ পড়াতে বাধ্য।
শপথের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে-এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার খোকন বলেন, এটা কোনো সমস্যা না। কারণ যিনি নির্বাচিত হবেন তিনি ৩০ দিনের মধ্যে শপথ না নিলে তার পদ শূন্য হয়ে যাবে। তখন নতুন নির্বাচন হবে। এখানে শপথ দেওয়া হয়নি। তাই তার দাবি রয়ে গেছে আইনগতভাবে। এখন নির্বাচন কমিশন বসে সিদ্ধান্ত জানাবে।
আদেশের অনুলিপির অপেক্ষায় সিইসি : প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, আদালতের আদেশের কপি হাতে পাওয়ার পর পর্যালোচনা করে ইশরাক হোসেনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের শপথ নিয়ে আপিল বিভাগের আদেশের পর গতকাল বিকালেই বৈঠকে বসে নির্বাচন কমিশন। আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন ও অন্য নির্বাচন কমিশনাররা প্রায় তিন ঘণ্টা ‘রুদ্ধদ্বার’ বৈঠক করেন। পরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আমরা আপিল বিভাগের কোনো আদেশের অনুলিপি এখনো (হাতে) পাইনি। কপি পাওয়ার পরে কী ধরনের সিদ্ধান্ত আসে, আইনি বিভিন্ন দিক পরীক্ষানিরীক্ষা করে আমাদের যা করণীয় করব। এ সময় গণমাধ্যমের হেডলাইন দেখে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ১ জুন বর্তমান দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে।
কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি ইশরাকের : অন্তর্বর্তী সরকার আদালত অবমাননা করছে দাবি করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, আপনারা অবিলম্বে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পদক্ষেপ নিন, অন্যথায় আগামীকাল (আজ) থেকে ঢাকা নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে এ আন্দোলন আরও বেগবান করা হবে, আরও চূড়ান্ত করা হবে। গতকাল দুপুরের পর নগর ভবনে চলমান বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে এ হুঁশিয়ারি দেন তিনি।