বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে ঝড়ো হাওয়ার পাশাপাশি ৬ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে গোটা সুন্দরবন। কটকা-কচিখালা, দুবলা, শেলারচরসহ সমুদ্র উপকলের বন ৬ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এদিকে, সুন্দরবনের সব থেকে উঁচু এলাকা চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রটিও ৮০ সেন্টিমিটার পানিতে তলিয়ে রয়েছে।
এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার দুপুরে জলোচ্ছ্বাসে দুবলারচরে মারা গেছে একটি হরিণ। শেলারচর টহল ফাঁড়ি এলাকার নদী থেকে ভেসে যাওয়া সময় একটি হরিণ উদ্ধার করেছেন বনরক্ষীরা। গোটা সুন্দরবনে জলোচ্ছ্বাসে কি পরিমাণ বন্যপ্রাণী মারা গেছে তা নিশ্চিত করে জানা না গেলেও করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রটিতে থাকা হরিণ, কুমির ও বিলুপ্ত প্রজাতির বাটাগুর বাচকা কচ্ছপসহ সব বন্যপ্রাণী নিরাপদ রয়েছে। জলোচ্ছ্বাসে লোনা পানিতে অধিকাংশ পুকুরতলিয়ে গেছে বলে নিশ্চিত করেছে বন বিভাগ।
বাগেরহাটের বলেশ্বর, ভৈরব, দড়াটানা, পানগুছি, পশুরসহ সব নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে দুই থেকে তিন ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। বাগেরহাটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের দু’টি পয়েন্ট শরণখোলার ও ফাশিয়াতলায় ৮০০ মিটার বেড়িবাঁধ চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বাগেরহাটে দিনভর বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীর পানি ফুঁসে ওঠায় জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ মোংলা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করেছে। নিম্নচাপের বৃষ্টিতে মোংলা বন্দরে পণ্য ওঠানামার কাজ কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। তবে বন্দর জেটি ও পশুর চ্যানেলের আউটার বারে অবস্থানরত ১০টি জাহাজে পণ্য ওঠানামার কাজ এখনো স্বভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। বৈরী আবহাওয়ায় বাগেরহাটের সব অভ্যন্তরীণ ও দূর পাল্লার রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা রানা দেব জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ঠ লঘুচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার দুপুরে ৬ ফুট জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবন তলিয়ে গেছে। পানিতে সুন্দরবনের বিভিন্ন টহল ফাঁড়ির অফিস ব্যারাক কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানির তীব্র স্রোতে শেলারচর থেকে একটি হরিণ ভেসে যাওয়ার সময় বনরক্ষীরা তা দেখতে পেয়ে হরিণটিকে উদ্ধার করেন। পরে উদ্ধারকৃত হরিণকে সুন্দরবনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। জলোচ্ছ্বাসে দুবলারচরে মারা গেছে একটি হরিণ।
পর্যটন স্পট কটকা অভয়ারণ্য কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেস্টার আব্দুস সবুর বলেন, জলোচ্ছ্বাসে কটকার বন ৬ ফুট পানিতে তলিয়ে যায়। এ সময় অনেক হরিণ কটকা ফরেস্ট অফিসের পুকুর পাড়সহ উঁচু জায়গায় এসে নিরাপদ আশ্রয় নেয়।
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার মো. আজাদ কবির জানান, নিম্নচাপের কারণে এই প্রজনন কেন্দ্রটি ৮০ সেন্টিমিটার পানিতে তলিয়ে রয়েছে। তবে এই প্রজনন কেন্দ্রটিতে থাকা থাকা হরিণ, কুমির ও বিলুপ্ত প্রজাতির বাটাগুর বাচকা কচ্ছপসহ সব বন্যপ্রাণী নিরাপদ রয়েছে। এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার দুপুরে সুন্দরবনের শেলারচর দহল ফাঁড়ি এলাকার নদী থেকে ভেসে যাওয়া একটি হরিণ উদ্ধার করেছে বনরক্ষীরা।
তবে গোটা সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে এই বন কর্মকর্তা বলেন, বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস না হলে ছোটখাটো দুর্যোগে এই বনের অধিকাংশ বন্যপ্রাণীরা নিজেরা টিকে থাকার ক্ষমতা রপ্ত করে নিয়েছে। এছাড়া বনের অভ্যন্তরে বিভিন্ন বন অফিসের উঁচু এলাকা, পুকুর পাড় ও ও টিলায় বন্যপ্রাণীর আশ্রয় নিয়ে থাকে।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করীম চৌধুরী বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে ৬ ফুট জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবন তলিয়ে যায়। জলোচ্ছ্বাসে পূর্ব সুন্দরবনের প্রায় সব পুকুর লোনা পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে করে বন্যপ্রাণীদের পান করা মিঠা পানির একমাত্র উৎস্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শেলারচর থেকে একটি হরিণ ভেসে যাওয়ার সময় বনরক্ষীরা তা দেখতে পেয়ে উদ্ধার করেছেন। দুবলারচরে একটি মৃত হরিণ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে জলোচ্ছ্বাসের পানিতে ডুবে হরিণটি মারা গেছে। আরো মৃত হরিণ পাওয়া যায় কিনা তা খুঁজে দেখার জন্য বনরক্ষীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত