ফিলিস্তিনের গাজা সিটি দখলে পরিকল্পিত স্থল অভিযানের ‘প্রাথমিক পদক্ষেপ’ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তারা ইতোমধ্যে অবস্থান নিয়েছে গাজা উপত্যকায়। এদিকে ইসরায়েলি বাহিনীর পরিকল্পিত স্থল অভিযানের খবরে বিপুলসংখ্যক ফিলিস্তিনি শহর ছাড়ছে বলে শহরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। টানা কয়েক দিনের তীব্র বোমা হামলা এবং গোলাবর্ষণের পর শহরের উপকণ্ঠে অবস্থান নিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা, যেখানে বসবাস ১০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনির।
গত মঙ্গলবার গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনার অনুমোদন দেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। চলতি সপ্তাহে বিষয়টি উত্থাপন করা হবে ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভায়। এ অভিযানে অংশ নিতে আগামী সেপ্টেম্বরের শুরুতে ৬০ হাজার সংরক্ষিত সেনা তলব করা হচ্ছে। তাদের রণাঙ্গনে লড়াইরত সেনাদের পরিবর্তে মোতায়েন করা হবে। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে এবং নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে নির্মম যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য নতুন করে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এমন একটি আক্রমণ যা ‘অনিবার্যভাবে মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞ’ ডেকে আনবে, তা এড়ানো প্রয়োজন। ইসরায়েলের একজন সামরিক মুখপাত্র জানিয়েছেন, অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে জেইতুন এবং জাবালিয়া এলাকায় সেনারা এরই মধ্যে কাজ করছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি গাজায় ‘শেষ সন্ত্রাসী ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত এলাকাগুলো দখলের জন্য সময়সীমা কমিয়ে আনছেন। এক বিবৃতিতে হামাস নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ‘গাজা সিটির নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে নৃশংস যুদ্ধ’ চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ এনেছে। পাশাপাশি তারা আঞ্চলিক মধ্যস্থতাকারীদের নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের প্রতি তার ‘অবহেলা’র সমালোচনা করেছে। ইসরায়েল এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এ পরিকল্পনার জবাব দেয়নি। আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি (আইসিআরসি) বলেছে, নতুন করে বাস্তুচ্যুতি ও সহিংসতা বেড়ে গেলে গাজার ২১ লাখ মানুষের জন্য পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে। গত মাসে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির পরোক্ষ আলোচনা ভেঙে যাওয়ার পর ইসরায়েল পুরো গাজা উপত্যকা দখলে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বক্তব্যে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন বলেন, ২২ মাসের যুদ্ধে এখন ‘ক্ষতবিক্ষত ও বিধ্বস্ত’ হামাস।
ইসরায়েলি পরিকল্পনা ব্যর্থ হবে : গাজা সিটি দখলের জন্য ইসরায়েলের পরিকল্পিত সামরিক অভিযানও অতীতের মতো ব্যর্থ হবে বলে মন্তব্য করেছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করে হামাস। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ বুধবার গাজা শহর দখলের উদ্দেশে অপারেশন ‘গিডিয়ন’স চ্যারিওটস ২’ নামে অভিযান শুরুর পরিকল্পনা অনুমোদনের পর হামাস এ বিবৃতি দিল। হামাস বলছে, ‘এ অভিযান আগেরগুলোর মতোই ব্যর্থ হবে। ইসরায়েল তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না এবং গাজার দখল আর আনন্দের হবে না।’ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এ পরিকল্পনাটি গাজা উপত্যকায় ২২ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলমান গণহত্যা বন্ধে যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তিতে কাজ করা মধ্যস্ততাকারীদের প্রচেষ্টাকে অসম্মান করে।’-বিবিসি
বিবৃতিতে হামাস জোর দিয়ে বলেছে, ‘তারা মধ্যস্থতাকারীদের উপস্থাপিত যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব গ্রহণ করলেও ইসরায়েলি সরকার শহরটিকে ধ্বংস এবং দক্ষিণে জনগণকে বাস্তুচ্যুত করার লক্ষ্যে গাজার নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে নৃশংস যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ওপর জোর দিচ্ছে।’ এতে আরও বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মধ্যস্থতাকারীদের প্রস্তাবের প্রতি অবজ্ঞা এবং সাড়া না দেওয়া থেকে বোঝা যায় যে, তিনিই চুক্তি লঙ্ঘনকারী, বন্দিদের জীবনের তিনি পরোয়া করেন না এবং তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আন্তরিক নন।’ বিবৃতিতে মধ্যস্ততাকারীদের প্রতি ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা বন্ধে ইসরাইলের ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানানো হয়েছে। -বিবিসি ও রয়টার্স