ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে ক্যারিবীয় দ্বীপদেশ ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ। ওয়াশিংটন ও কারাকাসের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকার মধ্যে সেখানে এই যুদ্ধজাহাজ উপস্থিত হল।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা তাদের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
আল-জাজিরা জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের গাইডেড-ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ইউএসএস গ্রেভলি যুদ্ধজাহাজ রবিবার (২৬ অক্টোবর) মেরিন সেনাসেদস্যদের নিয়ে ত্রিনিদাদের রাজধানী পোর্ট অব স্পেন-এ পৌঁছেছে।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জাহাজটি সেখানেই অবস্থান করবে। আর এই সময়ের মধ্যে মার্কিন মেরিন সেনাদের একটি দল ত্রিনিদাদ ও টোবাগো’র প্রতিরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে যৌথ মহড়া অনুষ্ঠান করবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার।
যুদ্ধজাহাজটিতে আছে অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবস্থা এবং হেলিকপ্টার পরিচালনা ব্যবস্থাও। ল্যাটিন আমেরিকায় মাদক-পাচারের বিরুদ্ধে বিশেষ করে, ভেনেজুয়েলাকে নিশানা করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জোরদার হতে থাকা সামরিক অভিযানের অংশ হিসাবে এই মহড়ার আয়োজন।
ত্রিনিদাদে অবস্থানরত আল জাজিরার সাংবাদিক জুলিয়া গালিয়ানো জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকার জনগণকে আশ্বস্ত করেছে যে যুদ্ধজাহাজের আগমনে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, “এটি একটি নিয়মিত সামরিক মহড়া, যুদ্ধের পূর্বাভাস নয়।”
তবে সাধারণ মানুষ বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় বাজারে কথা বলা এক ব্যক্তি বলেছেন, “যদি আমেরিকা ও ভেনেজুয়েলার মধ্যে কিছু ঘটে, আমাদের মতো সীমান্তবর্তী মানুষরাই প্রথম আঘাত পাব,”
৬৪ বছর বয়সী দানিয়েল হোল্ডার আরও বলেন, “আমি চাই না আমার দেশ এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ুক।”
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক বিশেষজ্ঞ জাভেদ আলি আলজাজিরাকে বলেছেন, “এটি মূলত সামরিক শক্তি প্রদর্শনের কৌশল, যাতে মাদুরো সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা যায়।” তবে তিনি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সামরিক উপস্থিতি ভেনেজুয়েলায় সরাসরি হামলার জন্য যথেষ্ট নয়।
ক্যারিবীয় অঞ্চলে মাদক পাচারকারী নৌযানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযানের জেরে ক্রমাগত আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়ছে। মাদকবাহী নৌযানে মার্কিন হামলায় বেশকিছু মানুষ নিহতের ঘটনাও ঘটেছে।
গত মাসের শুরু থেকে মার্কিন বাহিনী বেশ কয়েকটি মাদকবাহী নৌযানে হামলা চালায়, এর বেশিরভাগ হামলাই হয়েছে ক্যারিবীয় সাগরে। ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের এমন হামলা বাড়তে থাকার মধ্যে ভেনেজুয়েলার কাছে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ নোঙর করল।
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো মাদকচক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে অভিযোগ ট্রাম্পের। তবে মাদুরো এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
দুই দেশের মধ্যে অচলাবস্থা আরও বেড়ে যায় গত শুক্রবার, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদরদপ্তর পেন্টাগন ক্যারিবীয় অঞ্চলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস গেরাল্ড আর ফোর্ড মোতায়েনের নির্দেশ দেয়।
ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে সামরিক শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-কে ভেনেজুয়েলার অভিযান চালানোর এখতিয়ারও দিয়েছেন ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের বড় ধরনের সামরিক হুমকি থেকে নিজেদের উপকূল রক্ষায় ভেনেজুয়েলা প্রতিরক্ষা মহড়া শুরু করেছে বলে শনিবার জানিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির পাদ্রিনো।
সূত্র: আলজাজিরা
বিডি প্রতিদিন/নাজিম