চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মেয়ে শি মিংজেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের দাবি তুলেছেন কট্টর ডানপন্থী মার্কিন রাজনৈতিক ভাষ্যকার লরা লুমার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে তিনি দাবি করেন, শি মিংজে এখনো ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যে বিদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে অবস্থান করছেন এবং চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) সদস্যরা তাকে নিরাপত্তা দিচ্ছেন।
তবে লুমার তার এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেননি কিংবা কোনো সূত্রের নাম উল্লেখ করেননি। দ্য নিউইয়র্কার ২০১৫ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর সি মিংজে চীনে ফিরে যান এবং এরপর থেকে অনেকটাই আড়ালে জীবনযাপন করছেন।
এদিকে, লুমার তার পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওসহ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ট্যাগ করে এই ইস্যু ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। তবে নিউজউইক হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াশিংটনে অবস্থিত চীনা দূতাবাস এবং লুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো মন্তব্য পায়নি। এছাড়া সত্যিই কী শি জিনপিংয়ের মেয়ে এখনো হার্ভার্ডে পড়ছেন কিনা তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এই বিতর্ক সামনে এল এমন এক সময়, যখন ট্রাম্প প্রশাসন বিদেশি শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন নিয়ে হার্ভার্ডের সঙ্গে আইনি টানাপোড়েনে জড়িয়ে পড়েছে। প্রশাসন ইতিমধ্যে হার্ভার্ডের বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি বাতিল করেছে এবং প্রতিষ্ঠানটিকে ইহুদিবিদ্বেষ ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) সঙ্গে সম্পর্ক রাখার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে।
জানা গেছে, বর্তমানে হার্ভার্ডে পড়ুয়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে চীনা শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২০ শতাংশ। ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের এক গবেষণা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি করা ৯২ শতাংশ চীনা শিক্ষার্থী ডিগ্রি অর্জনের পাঁচ বছর পরও যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যান।
এদিকে, সম্প্রতি হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের নজরদারি বাড়ছে। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ব্যবসা, ভ্রমণসহ নানা ধরনের ভিসা যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নতুন নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভিসার আবেদন স্থগিত রেখেছে।
এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং ২৮ মে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘শিক্ষা সহযোগিতা ও বিনিময় কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়া উচিত নয়। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানাই, তারা যেন বিদেশি শিক্ষার্থীদের বৈধ অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করে।’
শি মিংজে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও বিখ্যাত লোকসংগীতশিল্পী পেং লিউয়ানের একমাত্র মেয়ে। ১৯৯২ সালে জন্ম নেওয়া মিংজে হার্ভার্ডে ছদ্মনামে পড়াশোনা করেন এবং ব্যক্তিগত জীবন গোপন রাখেন। ২০০৮ সালে সিচুয়ানে ভূমিকম্পের পর মাত্র ১৬ বছর বয়সে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেন তিনি। সূত্র : নিউজউইক।
বিডি-প্রতিদিন/শআ