গত ৩৫ বছরের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো কাশ্মীর উপত্যকায় সর্বাত্মক হরতাল পালিত হচ্ছে। মঙ্গলবার বিকালে ভারতের কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্র পাহেলগাঁওয়ে হামলার প্রতিবাদে বুধবার এই হরতাল পালিত হচ্ছে। সমাজের সকল স্তরের সংগঠন এই হরতালকে সমর্থন জানিয়েছে।
বুধবার গোটা উপত্যকার বিভিন্ন অঞ্চলে দোকান, পেট্রোল পাম্প, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান খোলা রয়েছে। গণপরিবহন কম দেখা গেলেও ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করেছে। বেসরকারি স্কুল, কলেজগুলো বন্ধ থাকলেও সরকারি স্কুল খোলা ছিল। এদিন সব পরীক্ষা স্থগিত রেখে কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উপত্যকার অন্য জেলাগুলিতেও সর্বাত্মক হরতালের চেহারা নিয়েছিল।
দক্ষিণ ও উত্তর কাশ্মীরে একই রকম দৃশ্য দেখা গেছে। বারামুল্লায়, শিক্ষার্থী সংগঠন এবং স্থানীয় বাসিন্দারা শোক ও সংহতি প্রকাশ করে প্রতিবাদী মিছিলে সংঘঠিত করেছে। গান্ডারবাল এবং অনন্তনাগে, দোকানদাররা স্বেচ্ছায় তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়।
নজিরবিহীন এই হরতাল সমস্ত রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় নেতা এবং নাগরিক সমাজের গোষ্ঠীগুলিকে একত্রিত করেছে এবং সকলেই এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
হরতালকে পুরোপুরি সমর্থন জানিয়েছে জম্মু কাশ্মীরের ক্ষমতাসীন দল 'ন্যাশানাল কনফারেন্সে' (এনসি), বিরোধী দল 'পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি' (পিডিপি), পিপলস কনফারেন্স, আপনি পার্টি-এর মতো রাজনৈতিক দলগুলি। মঙ্গলবার বিকালের দিকে পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ জন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন দুইজন বিদেশি নাগরিকও। পাশাপাশি নিহত ভারতীয়দের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের তিন নাগরিকও রয়েছেন।
ওই ঘটনার পরই মঙ্গলবার শ্রীনগর থেকে অনন্তনাগ, শোপিয়ান থেকে বারামুল্লা শান্তি ও ন্যায়বিচারের স্লোগানে গোটা উপত্যকা প্রতিধ্বনিত হয়েছিল। দিনভর প্রতিবাদ সমাবেশ, মোমবাতি প্রজ্বলন এবং নীরব মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
শ্রীনগরে, জম্মু কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী এবং পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডিপি) সভাপতি মেহবুবা মুফতি শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি মর্মস্পর্শী প্রতিবাদ মিছিলের নেতৃত্ব দেন।
হুরিয়ত কনফারেন্সের চেয়ারম্যান এবং কাশ্মীরের প্রধান ধর্মীয় নেতা মিরওয়াইজ উমর ফারুকও তার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
২০১৯ সালের আগস্ট মাসে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর এই প্রথমবারের মতো, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ সমাবেশ পরিচালনার অনুমতি দেয় এবং প্রতিটি বিক্ষোভই শান্তিপূর্ণ ছিল। গতকালের ঘটনার পর গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনস্থান, স্থাপনা ও মোড়গুলিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। জঙ্গি হামলার পরেই কাশ্মীরে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই তারা কাশ্মীর ছেড়ে নিজেদের রাজ্যে ফিরে যাচ্ছেন। এর জন্য ভারতের ডিরেক্টর জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশনের (ডিজিসিএ) নির্দেশে বিভিন্ন বিমান সংস্থা অতিরিক্ত ফ্লাইট চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এদিকে বুধবারই শ্রীনগরে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে (পিসিআর) গিয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ময়নাতদন্ত এবং সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এদিন সকালেই ওই নিহতদের লাশগুলিকে পিসি আর গ্রাউন্ডে নিয়ে আসা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে ছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ এবং জম্মু-কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা, জম্মু-কাশ্মীরের বিরোধী দলনেতা বিজেপি বিধায়ক সুনীল শর্মা। এর পাশাপাশি হামলাস্থল দক্ষিণ কাশ্মীরের বৈসারন পরিদর্শন করেন শাহ।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল