ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁও এলাকায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় কমপক্ষে ২৬ পর্যটক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। স্থানীয় সময় গতকাল বিকালের দিকে দক্ষিণ কাশ্মীরে পর্যটকদের লক্ষ্য করে এই অতর্কিত হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এদিকে, ঘটনার পরপরই গতকাল রাতে জম্মু-কাশ্মীরের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগরে পৌঁছান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় সরকারি সব এজেন্সির সঙ্গে জরুরি বৈঠক করার কথা রয়েছে তাঁর।
স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, এদিন দুপুর আড়াইটা নাগাদ পহেলগাঁওয়ের বাইসরন মিডো উপত্যকা এলাকায় পর্যটকদের ওপর নির্বিচারে গুলি ছুড়তে থাকে সেনা পোশাকপরিহিত একদল সন্ত্রাসী। স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে খবরে বলা হয়, সন্ত্রাসীরা সেনা পোশাকে হঠাৎ করে দলবেঁধে পর্যটকদের ওপর খুব কাছ থেকে গুলি চালানো শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যে ঘটনাস্থলেই আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়। আহত পর্যটকরা সাহায্যের জন্য চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করেন। এরপর স্থানীয় মানুষজন ছুটে এসে তাদের পাশে দাঁড়ায়। আহত ব্যক্তিদের স্থানীয় অনন্তনাগ হাসপাতালসহ দক্ষিণ কাশ্মীরের সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পহেলগাঁও হিল স্টেশন থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাইসরন মিডো। অঞ্চলটিতে শুধু হেঁটে বা ঘোড়ার পিঠে চড়ে যাতায়াত করা যায়। সন্ত্রাসী হামলার পরই ঘটনাস্থল ঘিরে রাখে নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীরা। হামলাকারীদের খোঁজে পেহেলগাঁও শহরে জোরদার অভিযান শুরু করেছে নিরাপত্তা বাহিনী।
এদিকে, হামলার পরই দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফোন করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে কথা বলেন এবং একই সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে হামলাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্স হ্যান্ডেলে মোদি লেখেন, ‘জম্মু কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। যারা এই হামলায় নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি আমার সমবেদনা রইল। আমি প্রার্থনা করি, আহত ব্যক্তিরা যাতে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। আহতদের সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা হবে।’ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পরপরই দিল্লিতে জরুরি পর্যায়ের বৈঠক ডাকেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা, গোয়েন্দা প্রধানরা ও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে, হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও শোকপ্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ, কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী প্রমুখ। এক্স হ্যান্ডেলে মমতা ব্যানার্জি লিখেছেন, ‘জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগের পহেলগাঁও অঞ্চলে নৃশংস সন্ত্রাসী হামলায় আমি গভীরভাবে মর্মাহত। যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের পরিবারের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। এই সহিংসতা সম্পূর্ণ নিন্দনীয় এবং শাস্তির বাইরে থাকা উচিত নয়।’