ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বেলা পৌনে ১২টার দিকে সায়েন্সল্যাব মোড়ে সংঘর্ষে জড়ান দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে মুহূর্তেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা। সংঘর্ষে উভয় কলেজের অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। টানা চার ঘণ্টা চলা এ সংঘর্ষে সায়েন্সল্যাব মোড় ও আশপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তীব্র যানজটে সাধারণ মানুষ, পথচারী ও রোগী নিয়ে স্বজনরা ভোগান্তিতে পড়েন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং উভয় কলেজের শিক্ষকরা চেষ্টা চালান। পুলিশ লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে শিক্ষার্থীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিকাল ৪টায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এদিকে সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি শান্ত রাখতে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজ কর্তৃপক্ষ বুধ ও বৃহস্পতিবার (২৩ ও ২৪ এপ্রিল) দুই দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, গতকাল দুপুরে সায়েন্সল্যাব মোড়ে দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা বাঁশ, কাঠ ও লাঠি নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে রাস্তায় নেমে আসেন। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সামনে অবস্থান নেন আর সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান নেন। দুই প্রান্ত থেকে দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা টার্গেট করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। মাঝখানে থেকে পুলিশ দুই গ্রুপকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। কিন্তু এতে কোনো কাজ হচ্ছিল না। দুই কলেজের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলতে থাকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা কলেজের একদল শিক্ষার্থী সিটি কলেজে গিয়ে হামলা চালান। এ সময় তারা কলেজ চত্বরে ভাঙচুর করেন। পরে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসেন। জানা গেছে, সোমবার ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেন সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনার ভিডিও ও তথ্য ঢাকা কলেজের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ে। এরই জের ধরে সিটি কলেজে হামলা হয়েছে।
আহত সিটি কলেজের শিক্ষার্থী আহসান শামীম জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাস থেকে নামার পরপরই ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। এতে আমাদের অন্তত ১৪-১৫ জন আহত হন। আমি ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছি। আহত ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ফজলে হাসান বলেন, গতকাল (সোমবার) আমাদের কলেজের এক শিক্ষার্থীকে মারধর ও অশ্লীল ছবি ধারণ করা হয়েছিল। সেই ঘটনার জের ধরেই এ সংঘর্ষের সূত্রপাত।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলম বলেন, সোমবারের একটি ঘটনার ভুল বোঝাবুঝির পরিপ্রেক্ষিতে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে। সেদিন ঢাকা কলেজের একজন শিক্ষার্থীকে সায়েন্সল্যাব এলাকায় মারধর করা হয়েছে। যার জন্য ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীরা মনে করেছেন এর সঙ্গে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা জড়িত। এরই জের ধরে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে। ঘটনায় সংঘর্ষের মাঝে পড়ে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা একটি ভিআইপি বাসে ভাঙচুর চালান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এটি নিত্যদিনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুই কলেজকে নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগে স্থায়ী সমাধান করতে হবে।
সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোবারক হোসেন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, সিটি কলেজের স্থাপনায় এবং শিক্ষার্থীদের ওপর যে হামলা হয়েছে, সেটির অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিত। এ ঘটনাগুলোর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। এর আগে ১৫ এপ্রিলও দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল, যেখানে কয়েকজন আহত হন এবং পুরো এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। গত ১০ এপ্রিল সংঘর্ষে জড়ান এই দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা। সেদিনও তাদের সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হন।