সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত শেষ করতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্সকে আরও ছয় মাস সময় দিয়েছেন হাই কোর্ট। তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দিতে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ গতকাল এ আদেশ দেন।
এই আদেশের পর প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে মামলা তদন্তের নথি পুড়ে যাওয়ার কথা জানানো হয় বলে দাবি করা হয়। এর পরই এক ধরনের ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়। কিছু সময় পরই সেই বক্তব্য রাষ্ট্রপক্ষ প্রত্যাহার করে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে সাধারণের মনে এখন প্রশ্ন জেগেছে যে, সেই মামলার নথি তাহলে কোথায়?
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ বলেছেন, ডিবিতে নথি আগুনে পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরোনো নথি ও ডকুমেন্টস খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ। তাই সময় চাওয়া হয়েছে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আখতার হোসেন মো. আবদুল ওয়াহাব। বাদীপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
বাদীপক্ষের আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, আদালত প্রশ্ন করেছিলেন, এত সময় কেন প্রয়োজন? এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেছেন, সাগর-রুনি হত্যা মামলার কিছু নথিপত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সিডি-ডিভিডি, কোন জায়গায় কি হয়েছে, মিসপ্লেস হয়ে গেছে। যথেষ্ঠ জায়গায় নেই।
জানা যায়, রাষ্ট্রপক্ষ ৯ মাস বৃদ্ধির কথা বললে বাদীপক্ষে অ্যাডভোকেট শিশির মনির তিন মাস বৃদ্ধির কথা বলেন। আদালত ছয় মাস বৃদ্ধির মৌখিক আদেশ দেন। এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর হাই কোর্ট সাগর-রুনি হত্যা মামলা তদন্তে বিভিন্ন এজেন্সির অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তদন্ত শেষ করে ছয় মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। আদালতের আদেশের পর উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করা হয়।
এদিকে তদন্ত শেষ করে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে হাই কোর্টের দেওয়া ছয় মাস সময় ইতোমধ্যে শেষ হয়। এ অবস্থায় তদন্ত চলমান ও অগ্রগতি আছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপক্ষ নয় মাস সময়ের আরজি জানায়। শুনানি নিয়ে আদালত ছয় মাস সময় মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে আগামী ২২ অক্টোবর আদেশের জন্য পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়।
এদিকে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি আংশিক আগুনে পুড়ে গেছে বলে যে তথ্য জানানো হয়েছে তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
গতকাল দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাওয়ার তথ্যটি সঠিক নয়।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি তাদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায়।
ওই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি রুনির ভাই নওশের আলী রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা করেন। প্রথমে এই মামলা তদন্ত করছিল শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ। চার দিন পর মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার ৬২ দিনের মাথায় ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হাই কোর্টে ব্যর্থতা স্বীকার করে ডিবি। দুই মাস পর হাই কোর্টের আদেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় র্যাবকে। সেই থেকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি সংস্থাটি।
গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর তদন্ত থেকে র্যাবকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে উচ্চপর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাই কোর্ট। একই সঙ্গে ৬ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। পরে চার সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধানকে আহ্বায়ক করা হয়।