যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ নেতারা প্রকাশ্যে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের প্রতি আগ্রহ দেখালেও, এবার উঠে এসেছে আরও কঠোর অবস্থানের তথ্য। মার্কিন আলোচকরা ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদে প্রবেশাধিকার পাওয়ার কৌশল হিসেবে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনটি নির্ভরযোগ্য সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি যখন মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টের প্রাথমিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন, তখন এই ইস্যু আলোচনায় উঠে আসে। স্টারলিংক বর্তমানে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারনেট সংযোগ সরবরাহ করছে, যা ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর জন্যও অপরিহার্য।
একটি সূত্র জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইউক্রেন বিষয়ক বিশেষ দূত কিথ কেলগ এবং জেলেনস্কির বৈঠকের সময় বিষয়টি পুনরায় উত্থাপিত হয়। সূত্রটি জানিয়েছে, যদি ইউক্রেন গুরুত্বপূর্ণ খনিজসম্পদের চুক্তি না করে, তবে স্টারলিংক পরিষেবা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ওই সূত্র আরও বলেছে, "ইউক্রেন সম্পূর্ণরূপে স্টারলিংকের ওপর নির্ভরশীল। স্টারলিংক হারানো ইউক্রেনের জন্য বড় ধাক্কা হবে।"
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি: ৫০০ বিলিয়ন ডলারের খনিজ সম্পদ
জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের ৫০০ বিলিয়ন ডলারের ইউক্রেনীয় খনিজসম্পদ দাবির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন, কারণ যুক্তরাষ্ট্র কোনো নির্দিষ্ট নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেয়নি। শুক্রবার জেলেনস্কি জানান, মার্কিন ও ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিরা একটি চুক্তি নিয়ে কাজ করছে। ট্রাম্পও বলেছেন, "আমি আশা করি, খুব শিগগিরই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হবে।"
স্টারলিংক: বন্ধ হতে পারে?
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর ইউক্রেনের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। তখন ইলন মাস্ক হাজার হাজার স্টারলিংক টার্মিনাল পাঠিয়ে সহযোগিতা করেছিলেন। সে সময় ইউক্রেনে তাঁকে নায়ক হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। তবে, ২০২২ সালের শেষদিকে তিনি কিয়েভের যুদ্ধ কৌশল নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং স্টারলিংকের পরিষেবা সীমিত করেন।
কৌশলগত গুরুত্ব ও মার্কিন অবস্থান
যুক্তরাষ্ট্রের কিছু আইনপ্রণেতা ট্রাম্পের ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত সমাপ্ত করার কৌশল নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত। কিছু আইনপ্রণেতা ইলন মাস্কের হাজার হাজার ফেডারেল কর্মী ছাঁটাই ও সরকারি সংস্থাগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনারও সমালোচনা করেছেন।
স্টারলিংক হারানো কতটা ভয়াবহ হবে?
থিংক ট্যাংক আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র ফেলো মেলিন্ডা হারিং বলেছেন, "ইউক্রেনের সামরিক কৌশলের মূল স্তম্ভ হিসেবে ড্রোন নিয়ন্ত্রণের জন্য স্টারলিংক অপরিহার্য।"
তিনি বলেন, "স্টারলিংক হারানো যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি বদলে দিতে পারে। বর্তমানে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে ড্রোন ব্যবহারে ১:১ অনুপাত বজায় রয়েছে।"
খনিজ সম্পদ ও কূটনৈতিক চাপ
২০২৪ সালের শরতে ইউক্রেন নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ খনিজসম্পদে মিত্রদের বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। এটি ছিল জেলেনস্কির ‘বিজয় পরিকল্পনার’ অংশ, যার মাধ্যমে তারা আলোচনার টেবিলে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে চেয়েছিল।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এই পরিকল্পনাকে সমর্থন করে বলেছেন, "আমি চাই ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রকে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সরবরাহ করুক। এর বিনিময়ে আমরা ইউক্রেনের যুদ্ধ প্রচেষ্টায় আর্থিক সহায়তা দেব।"
মার্কিন শর্ত: ৫০% খনিজের মালিকানা
গত সপ্তাহে জেলেনস্কি মার্কিন একটি বিস্তারিত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, "যুক্তরাষ্ট্র ও মার্কিন কোম্পানিগুলো ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজসম্পদের ৫০% মালিকানা চায়।"
এই খনিজগুলোর মধ্যে গ্রাফাইট, ইউরেনিয়াম, টাইটানিয়াম এবং লিথিয়াম রয়েছে, যা সামরিক ও প্রযুক্তি শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। ট্রাম্প গত বুধবার জেলেনস্কিকে ‘অনির্বাচিত একনায়ক’ বলে অভিহিত করেছেন। এর আগে জেলেনস্কি বলেছিলেন, "ট্রাম্প রাশিয়ার বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার ফাঁদে পড়েছেন।"
সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি নিউজ, দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট
বিডি প্রতিদিন/আশিক