অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সরকারি চাকুরেদের জন্য নতুন পে-কমিশনের সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচিত সরকার। গতকাল সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক এবং অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান। একটা পে-কমিশনের ব্যাপার আছে। সেটা আমরা এখন কিছু বলতে পারি না। কারণ ওটা দেখা যাক; কতদূর যায়। সেটা আগামী সরকারের কাছে দিয়ে যাব। আগামী সরকার হয়তো সেটা করতে পারে। যেহেতু আমরা করেছি, প্রাথমিক কাজ করে ফেলেছি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের সঙ্গে চূড়ান্ত কথা হবে ১৫ তারিখে। তাদের সঙ্গে আমার জুমে কথা হয়েছে। ওরা বলেছে, তোমাদের সার্বিক অর্থনৈতিক দিকটা নিয়ে আমরা অত্যন্ত খুশি। ঠিক আছে- যা যা করার তোমরা চেষ্টা করছো, করেছো। আইএমএফের কিছু কিছু সুপারিশ আছে : যেমন, রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। সেটা আমি স্বীকার করেছি। ট্যাক্স-জিডিপির অনুপাত কম, সেটার অনেক কারণ আছে। আমাদের লোকজন কর দিতে চায় না। আবার এনবিআর বন্ধ ছিল দুই মাস। সেটার জন্য আমাদের বিরাট একটা সমস্যা হয়েছে। তবুও আমরা চেষ্টা করছি।
দ্বিতীয়ত, ওদের (আইএমএফ) আরেকটা সিদ্ধান্ত আছে- সামাজিক সুরক্ষার জন্য আরও বেশি ব্যয় করা। বিশেষ করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা এবং খাদ্যটা। খাদ্যটা আমরা মোটামুটি ভালো করছি।
তিনি বলেন, আগে আমরা যতটুকু কাজ করেছি, সেটাকে একত্রিত করব। সংস্কার শেষ করে ফেলব সেটা তো নয়। কারণ, সংস্কার তো শেষ করা যাবে না। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। আমরা এটাকে একটা ভালো প্যাকেজিং করে পরবর্তী সরকারকে দেব। যেসব বৃহৎ সংস্কার রয়েছে আগামী সরকার করবে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমি একটা কমিটি করেছি করের ব্যাপারে। আপনারা জানেন, কিছু ইকোনমিস্টদের নিয়ে, তারা ইনডিপেন্ডেন্ট। তারা কিছু সুপারিশ দেবে। সেগুলোও পরের সরকারের হাতে দেওয়া হবে।
অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, ব্যাংকিং খাত নিয়ে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। মোটামুটিভাবে শুরু হয়েছে, আর বাকিগুলো আস্তে আস্তে করব। এ জিনিসগুলো আমরা আগামী সরকারের জন্য দিয়ে দেব।
এদিকে একই স্থানে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সে প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, দেশের সার্বিক দিকের অগ্রগতি ভালো। মূল্যস্ফীতি কমেছে। বাসা ভাড়া ও পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, পণ্যের দাম সহনীয় মাত্রায় আনতে। তবে সার্বিকভাবে পণ্যের দাম স্বাভাবিক আছে। চালের দামও সহনীয় রয়েছে। অপরিশোধিত তেল আমদানির জন্য চেষ্টা করছে সরকার। সার ও কৃষিতে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। আজকের (গতকাল) ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে বিভিন্ন দেশ থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন সার ও ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, এ বছর আমন মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ৭ লাখ মেট্রিক টন ধান ও চাল কিনবে সরকার। এর মধ্যে ৫০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন ধান ও ৬ লাখ টন সেদ্ধ চাল ও ৫০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি কেজি আমন ধানের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪ টাকা আর সেদ্ধ চাল কেনা হবে ৫০ টাকা এবং আতপ চাল ৪৯ টাকা কেজি দরে। ধান ও চালের এ দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ৪ টাকা বেশি। এই ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হবে ২০ নভেম্বর। চলবে আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।