দশম গ্রেডসহ তিন দফা দাবি আদায় ও শাহবাগে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন আন্দোলনরত সহকারী শিক্ষকরা। ফলে গতকাল দেশের প্রায় ৬৫ হাজারের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ ছিল। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছেন তারা। এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় দাবি-দাওয়া নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে সচিবালয়ে যান শিক্ষক নেতারা। বেতন বৃদ্ধি ও পদোন্নতির দাবিতে গতকাল সকাল থেকে সারা দেশের ৬৫ হাজারের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি শুরু সহকারী শিক্ষকদের। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে এলেও শিক্ষকরা পাঠদান বন্ধ রেখেছেন। ফলে বাধ্য হয়ে ক্লাস না করেই ফিরে যেতে হচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীদের। এদিকে গতকাল বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কালো কাপড়ে মুখ বেঁধে পুলিশি হামলার প্রতিবাদ জানান আন্দোলনরত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। শহীদ মিনারে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি এবং বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি চলবে বলে জানিয়েছেন তারা। এ সময় শিক্ষক নেতা শামসুদ্দিন মাসুদ বলেন, ১১টি শিক্ষক সংগঠন আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছে। আমরা সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত নেব।
এর আগে, বিকাল পৌনে ৪টার দিকে কাফনের কাপড় হাতে শিক্ষকরা শপথ নেন- ‘দশম গ্রেড এবং শতভাগ পদোন্নতি ছাড়া ফিরে যাবেন না’। শপথ শেষে শিক্ষক নেতা আনিসুর রহমান আনিস বলেন, একই যোগ্যতা নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দশম গ্রেড পাচ্ছে। কিন্তু আমরা পাচ্ছি ১৩তম গ্রেড। বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট হয়েও আমাদের দিনমজুরের অর্ধেক বেতনে চাকরি করতে হয়। যখন বেতন-ভাতা বৃদ্ধির আলোচনা আসে, তখন কোষাগারে টান পড়ে। অথচ দেশে শত কোটি টাকার দুর্নীতি হচ্ছে। রাষ্ট্রের কাছে আমরা আমাদের ন্যায্য দাবি জানিয়েছি। কিন্তু শাহবাগে আমাদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলা হয়েছে।
এদিকে রাজধানীর শাহবাগে শিক্ষকদের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল নিক্ষেপ এবং লাঠিপেটায় শতাধিক শিক্ষক আহত হওয়ার ঘটনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ।
অন্যদিকে, শাহবাগের আন্দোলন থেকে আটকের ২১ ঘণ্টা পর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষককে ছেড়ে দিয়েছে শাহবাগ থানা পুলিশ। মুক্তি পাওয়া পাঁচ শিক্ষক হলেন- জয়পুরহাটের সহকারী শিক্ষক মু. মাহবুবুর রহমান, পটুয়াখালীর নজরুল ইসলাম লিটন, জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের আবদুল কাদের, ধামরাইয়ের শরিফুল ইসলাম ও কুমিল্লার সোহেল রানা।
উল্লেখ্য, দশম গ্রেডে বেতন-ভাতাসহ তিন দফা দাবিতে গত শনিবার থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন সহকারী শিক্ষকরা। ১৫ নভেম্বরের পর তাদের কর্মবিরতিতে যাওয়ার কথা ছিল। তবে অবস্থান কর্মসূচির প্রথমদিনে শাহবাগে ‘কলম সমর্পণ’ কর্মসূচিতে পুলিশের হামলার ঘটনায় তা এগিয়ে আনেন শিক্ষকরা।