রাজধানীর মিরপুরের বেড়িবাঁধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রায় ৭২ কাঠা জমি বিক্রি করে দিয়েছেন খোদ সংস্থাটির দুই কর্মকর্তা। জায়গাটি কিনে আবার সেখানে আবাসন প্রকল্প শুরু করেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী দুই নেতা। নাম দেওয়া হয় আন-নামী রিভার ভিউ সিটি। তারা হলেন- আন-নামী প্রপার্টিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল আমিন দারা এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিবুল্লাহ।
পরবর্তীতে ওই সিটিতে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকায় কাগজের নকশায় ৭৬টি ভুয়া প্লট বানিয়ে বুকিং দেয় পিচ রিয়েল এস্টেট নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান। এরপরই ওই জমিতে বেদখল পাল্টা বেদখল চলে বেশ কয়েক বছর। সর্বশেষ ওই ভূমি দখলে রাখতে বস্তি ও মন্দির নির্মাণ করেন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ।
এদিকে ১০ বছরের বেশি সময়েও প্লট বুঝে না পেয়ে গত বছরের ৬ অক্টোবর আদালতে মহিবুল্লাহ এবং আবদুল্লাহ আল আমিন দারার বিরুদ্ধে মামলা করেন শাবাব কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স নামে গড়ে ওঠা একটি সমিতির প্রতিষ্ঠান পিচ রিয়েল এস্টেটের সদস্য কামালুদ্দিন ফারুকী। পরে মামলাটির তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, ২০০৯ সালের ৩১ আগস্ট এবং ২০১১ সালের ১৯ জুলাই এবং ১১ আগস্ট মোট ৮টি দলিলে সরকারি ওই জমি সাফ কবালা রেজিস্ট্রি করে দেন পাউবোর সাবেক উপপরিচালক কাজী মো. মাহফুজুর রহমান এবং শনাক্তকারী ছিলেন পাউবোর জিল্লাদার আবদুর রব। রেজিস্ট্রির সময় পাউবোর দুটি কাগজ ব্যবহার করা হয়। সংস্থাটির তৎকালীন মহাপরিচালক আবুল কালাম মোহা. আজাদের স্বাক্ষর করা ২০০৯ সালের ১৬ মার্চের ৪৭তম সভার কার্যবিবরণী। এর স্মারক- ৩৩/পাউবো/সচিব/পরি- সভা/৪৭/২০০৯। একই সঙ্গে ব্যবহার করা হয় পাউবোর ঢাকা কেন্দ্রীয় অঞ্চলের উপপরিচালক (প্রশাসন) এম রহমানের স্বাক্ষর করা ওই বছরের ১৬ এপ্রিলের একটি অফিস আদেশ। এর স্মারক- কে/অ/ভূমি-৫২/১০০৭। এসব তথ্য ফাঁস হয়েছে প্রায় ১০ বছর পর।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখানে যোগসাজশে দুর্নীতি হয়েছে। এর সঙ্গে যারা সরাসরি জড়িত তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডও দায় এড়াতে পারে না। এক্ষেত্রে তিনটি পক্ষ অপরাধী তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে এবং অনুসন্ধান করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। জমিটি কীভাবে বিক্রি হলো সে সম্পর্কে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপপরিচালক জহিরুল ইসলাম বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড কিংবা সরকারি যে কোনো জায়গা বিক্রির কোনো সুযোগ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জমি রেজিস্ট্রি দাতা কাজী মাহফুজুর রহমান ২০০৭ সালের ১৯ জুন অবসরে যান। গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর মারা গেছেন। তার বাড়ি পটুয়াখালী সদরের কলাতলায়। তবে শনাক্তকারী আবদুর রবের খোঁজ পাওয়া যায়। মোবাইলফোনে তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমি কিছু জানি না। আবদুর রব থাকেন রাজধানীর দক্ষিণ বাসাবোর ৯৩ নম্বর বাড়িতে। তিনিও পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিল্লাদার পদে চাকরি করতেন। তবে তিনি ২০১০ সালের ৭ জুন অবসরে গেছেন।
জমিটির সর্বশেষ ক্রেতাদের অন্যতম এবং মামলার বাদী কামালুদ্দীন ফারুকী বলেন, জমি বিক্রি নিয়ে প্রতারণার ঘটনায় আমরা মামলা করেছি। ওই প্রতারণায় আমাদের প্রায় ৫০০ জন সাধারণ আয়ের মানুষ ভুক্তভোগী। তাদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু কায়সার বলেন, বিক্রির সময় মহিবুল্লাহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরাদ্দের কাগজপত্রও দেখান। ওই বরাদ্দপত্রে তৎকালীন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের স্বাক্ষরও আছে। কিন্তু এখন পানি উন্নয়ন বোর্ড সেসব অস্বীকার করছে।