ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে তামিলাগা ভেত্তরি কাঘাজাম (টিভিকে) দলের প্রধান অভিনেতা-রাজনীতিক বিজয়ের সমাবেশে পদদলনের মতো এক ঘটনায় অন্তত ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১০ শিশু ও ১৭ নারী রয়েছেন। এ ছাড়া পদদলনের ঘটনায় আরও ৪৬ জন আহত হয়েছেন বলে কর্মকর্তাদের বরাতে জানিয়েছে এনডিটিভি। ইকোনমিক টাইমস জানায়, বিজয়ের কথা শুনতে প্রচুর মানুষ সমাবেশে হাজির হয়েছিলেন, এরই একপর্যায়ে ভিড় নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়লে ঘটনাটি ঘটে।
ভিড়ের চাপ অসহনীয় হয়ে উঠলে রাজনৈতিক দলটির কয়েকজন কর্মী ও শিশুসহ বহু মানুষ জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) জানিয়েছেন, হঠাৎ মানুষের ভিড় বেড়ে যাওয়ার পর আতঙ্ক তৈরি হয়, চাপের কারণে অনেকেই তাদের পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না।
কর্মীদের সতর্ক সংকেতের মুখে বিজয় মাঝপথে তার বক্তৃতা থামিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। প্রচারণা বাসের ছাদে দাঁড়িয়ে তিনি অজ্ঞান হয়ে যাওয়া লোকজনকে সহায়তা করতে ভিড়ের দিকে পানির বোতল ছুড়ে দিতে থাকেন। এর মধ্যে ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুলেন্স ছুটে এলেও রাস্তা মানুষজনে পরিপূর্ণ হয়ে থাকায় ভিতরে ঢোকার পথ পাচ্ছিল না, এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ কর্মকর্তারা এনডিটিভিকে জানান, বিশাল সংখ্যক মানুষ আরও এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে অসহনীয় চাপ তৈরি হয়, এতে বহু মানুষ জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান আর তখন আতঙ্কিত লোকজন ছুটাছুটি শুরু করলে পদদলনের ঘটনাটি ঘটে। এক জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ওই জায়গায় ‘অন্ততপক্ষে ৩০ হাজার মানুষ সমবেত’ হয়েছিল।
সমাবেশে উপস্থিত হতে বিজয়ের ছয় ঘণ্টারও বেশি দেরি হয়, এর মধ্যে স্রোতের মতো মানুষ এসে হাজির হয়। এ শোচনীয় ঘটনায় সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ নিজের মর্মাহত হওয়ার কথা জানিয়ে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন। আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, কারুরে রাজনৈতিক সমাবেশ চলাকালে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক।
এদিকে পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে অ্যাম্বুলেন্সকে ব্যাপক বেগ পেতে হয়েছে। প্রচণ্ড ভিড়ের মাঝে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সমাবেশস্থলে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। চেন্নাইয়ের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ডিএমকে বিজয়ের দলের নেতা-কর্মীদের অবহেলার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছে। একই সঙ্গে থালাপতি বিজয়কে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে দলটি।
এর আগে, গত ২০ সেপ্টেম্বর দলের কর্মী-সমর্থকদের জন্য কঠোর নিরাপত্তা ও আচরণবিধি জারি করে টিভিকে। এতে বলা হয়েছিল, বিজয়ের সমর্থকরা যেন তার গাড়ি বা গাড়িবহর অনুসরণ এবং প্রকাশ্যে তাকে বরণের আয়োজন না করেন। পাশাপাশি গর্ভবতী নারী, শিশু, প্রবীণ ব্যক্তি, শারীরিকভাবে অক্ষম এবং অসুস্থদের সমাবেশে না এসে অনলাইনে অনুষ্ঠান দেখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।