নানান নাটকীয়তা শেষে ভোট গ্রহণের ৪৮ ঘণ্টা পর গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু করা হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদের ফল ঘোষণা। এর মাঝে পদত্যাগ করেন নির্বাচন কমিশনের দুই সদস্য। ফল প্রকাশে দেরি হলেও নির্বাচনে কোনো কারচুপি ও অনিয়ম হয়নি বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তারা বলেছেন, ওএমআর মেশিনের পরিবর্তে ম্যানুয়ালি পদ্ধতিতে হাতে ভোট গণনা করায় ফলাফল পেতে দেরি হয়েছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার ৫ ঘণ্টা পর রাত ১০টা থেকে শুরু হয় ভোট গণনা। শুরুতে হল সংসদের ভোট গণনা শুরু করে কমিশন। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী ওএমআর মেশিনে ভোট গণনার কথা থাকলেও নির্বাচনের আগের দিন বুধবার দিবাগত রাতে ছাত্রদলসহ কয়েকটি প্যানেলের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভোট গণনার ঘোষণা দেয় কমিশন। নির্বাচনের দিন ব্যালট পেপার ও ওএমআর মেশিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করে শিবির ও ছাত্রদল। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে হাতেই ভোট গণনা শুরু হয়।
নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্টরা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে মাত্র তিনটি বুথে চলে ভোট গণনার কার্যক্রম। এর ফলে ভোট গণনায় ধীরগতি দেখা দেয়। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত হল সংসদের ভোট গণনা শেষ না হওয়ায় নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়। দ্রুত ভোট গণনা শেষ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, সরকারের উচ্চ মহল ও প্রার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চাপ দিতে থাকেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিকাল ৪টায় বৈঠকে বসে নির্বাচন কমিশন। এ সময় বন্ধ হয়ে যায় ভোট গণনা। এদিকে বৈঠকে ভোট গণনায় গতি বাড়াতে গণনা বুথ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। তবে এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য ও জাবির জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার। ছাত্রদলসহ নির্বাচন বর্জন করা ৫টি প্যানেলের অভিযোগগুলোর সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত ভোট গণনা বন্ধ রাখার দাবি জানান। তবে নির্বাচন কমিশন তার দাবি উপেক্ষা করে ভোট গণনা পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে সন্ধ্যা ৬টা থেকে গণনা বুথ বৃদ্ধি করে আবার ভোট গণনা শুরু করে প্রশাসন। শুক্রবার রাতেই হল সংসদের ভোট গণনা শেষে কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট গণনা শুরু হয়। গতকাল বিকাল ৪টায় শেষ হয় কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট গণনা। এদিকে রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলাভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন কমিশন থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার।
ফল প্রকাশে বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব এ কে এম রাশেদুল আলম জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ৩৩ বছরে আমরা জাকসু নির্বাচন দেখিনি। তাই আমাদের অভিজ্ঞতাও কম। নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে যাতে কোনো প্রকার ভ্রান্তি বা সংশয় না থাকে, সেজন্য প্রত্যেকটি ব্যালট সঠিকভাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে। এরপর তথ্য বিশ্লেষণ করে চূড়ান্ত ফলাফল তৈরি করা হবে। এ কারণে সময় বেশি লাগছে। তিনি বলেন, নিখুঁতভাবে কাজ করতে হলে সময়ের প্রয়োজন। এখানে তড়িঘড়ি করেও কিছু করা যাবে না। প্রত্যেকটি ভোট অত্যন্ত মূল্যবান। এখান থেকে যে ফলাফল আসবে, তা সুন্দর, গোছানো ও যুক্তিযুক্ত হবে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় জাকসুর কেন্দ্রীয় ও হল সংসদে ভোট গ্রহণ। পোলিং এজেন্ট নিয়োগ নিয়ে গড়িমসি, ভোটার তালিকায় ছবি না থাকা, অমোছনীয় কালি ব্যবহারসহ নানা অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে বিকাল ৫টায় ভোট গ্রহণ শেষ হয়। এর মাঝে বিকাল ৪টায় কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন করে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল। পরে সন্ধ্যা ৭টায় ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয় প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের চার প্যানেল।
তবে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামান বলেন, কারচুপি কিংবা জাল ভোটের মতো কোনো ঘটনা প্রমাণ করতে পারলে আমি চাকরি ছেড়ে চলে যাব। কোনো পেনশনের টাকাও গ্রহণ করব না। তিনি আরও বলেন, হলগুলোতে কয়েক স্তরে ভোটারদের তথ্য যাচাইবাছাই করে ভোট গ্রহণ করেছি। সেখানে একাধিক প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট উপস্থিত ছিলেন। পোলিং অফিসার, রিটার্নিং কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করেছেন। সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ এবং জায়ান্ট স্ক্রিনে প্রদর্শন করা হয়েছে। সবার সামনেই ভোট হয়েছে। কেউ আমাকে ভোট কারচুপি কিংবা জালিয়াতির মতো কোনো অভিযোগ করেননি। এ ছাড়া ভোট গণনার কাজে একাধিক শিক্ষক সম্পৃক্ত রয়েছেন। এখানেও সবকিছু সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনেই হয়েছে। ভালোমন্দ তারা বিচার করবেন।