রাজনৈতিক প্রতিশোধের এক নজিরবিহীন পদক্ষেপের সম্ভাবনা নিয়ে মার্কিন রাজনীতি তোলপাড়। রিপাবলিকানদের মধ্যে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দেওয়া কিছু ক্ষমার সিদ্ধান্ত বাতিল করার উদ্যোগ নিয়ে দানা বাঁধছে নানা আলাপ। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংবিধান বা বর্তমান আইনে এর কোনো ভিত্তি নেই।
মার্কিন সংবিধানে প্রেসিডেন্টের ক্ষমা করার ক্ষমতাকে অন্যতম অবাধ ক্ষমতা হিসেবে গণ্য করা হয়। সংবিধানে এই ক্ষমতাটি এক লাইনেরও কম জায়গায় বর্ণিত। যেখানে বলা হয়েছে, তিনি (প্রেসিডেন্ট) যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের জন্য মওকুফ এবং ক্ষমা মঞ্জুর করার ক্ষমতা রাখবেন, তবে অভিশংসনের ক্ষেত্রে নয়।
পরবর্তী কোনো প্রেসিডেন্ট বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ সেই ক্ষমা বাতিল করতে পারে কিনা সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে কিছুই বলা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় স্তরে বৈধভাবে দেওয়া ক্ষমা বাতিলের কোনো পূর্ব নজিরও নেই।
স্ট্যানফোর্ড আইন স্কুলের অধ্যাপক বার্নাডেট মেয়লারের মতে, ফেডারেল স্তরে ক্ষমা বাতিলের কোনো উদাহরণ নেই। রাজ্য স্তরের মামলায়ও ক্ষমা বাতিল করতে হলে ঘুষ বা প্রতারণার মতো খুব কঠোর শর্ত পূরণ করতে হবে, যা বর্তমানে আলোচিত বিতর্কের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
ক্ষমা বাতিলের চেষ্টার প্রধান কারণ হিসেবে রিপাবলিকানরা দুটি বিষয়কে সামনে আনছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন যে অটোপেন (স্বয়ংক্রিয় স্বাক্ষর যন্ত্র) দিয়ে স্বাক্ষরিত বাইডেনের ক্ষমাগুলো অকার্যকর। তবে অটোপেন অনেক প্রেসিডেন্টই ব্যবহার করেছেন, এমনকি ট্রাম্পও তার প্রথম মেয়াদে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন। বাইডেন নিশ্চিত করেছেন যে সব ক্ষমার সিদ্ধান্ত তাঁরই ছিল এবং বেশি সংখ্যক স্বাক্ষরের জন্য অটোপেন ব্যবহার করা হয়েছে। হাউস ওভারসাইট কমিটি বাইডেনের শারীরিক ও মানসিক যোগ্যতার প্রশ্ন তুলে এই দাবি করছে যে, তিনি যদি যথেষ্ট সক্ষম না হন তবে তার নির্বাহী পদক্ষেপ, যার মধ্যে ক্ষমাও রয়েছে বাতিল করা উচিত।
অধ্যাপক মেয়লার স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্টের কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য যোগ্যতার পরীক্ষা নেওয়ার কোনো সাংবিধানিক প্রয়োজন নেই। অসুস্থতা বা অক্ষমতার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টকে অপসারণের জন্য ২৫তম সংশোধনী রয়েছে কিন্তু সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ না করলে তার নেওয়া পদক্ষেপ অবৈধ হবে না।
যদি কেউ এই ক্ষমাগুলোকে চ্যালেঞ্জ করতে চায়, তবে কী প্রক্রিয়া অনুসরণ করা যেতে পারে? প্রথমত আছে আইনি পদক্ষেপ। অ্যাটর্নি জেনারেল হয়তো একটি ডিক্লেরেটরি জাজমেন্টের জন্য মামলা করতে পারেন। অর্থাৎ, আদালতকে দিয়ে ঘোষণা করাতে চাইতে পারেন যে এই ক্ষমাগুলো স্বাক্ষরের বা প্রদানের কোনো ত্রুটির কারণে অবৈধ ছিল। দ্বিতীয়ত ফ্যাক্ট-বেসড ডিটারমিনেশন। মেয়লারের মতে, এটি একটি তথ্য-নির্ভর সিদ্ধান্ত হবে। যেহেতু বাইডেন ব্যক্তিগতভাবে সব ক্ষমার অনুমোদন দেওয়ার দাবি করেছেন, তাই এই আইনি চ্যালেঞ্জে জয়লাভ করা কঠিন হবে।
আইন বিশেষজ্ঞদের ধারণা, যদি বাইডেনের ক্ষমা চ্যালেঞ্জ করে মামলা সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছায়, তবে আদালত বাইডেনের ক্ষমতার ওপর কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করবে না। কারণ, আদালতের প্রবণতা সাধারণত প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাকে আরও বিস্তৃত করার দিকেই গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এছাড়া, এই যুক্তি যদি বাইডেনের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়, তবে তা ভবিষ্যতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধেও ব্যবহার করা যেতে পারে। তাই আদালত এ ধরনের সংকীর্ণ অবস্থানে যাবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
তাই বলা বলা যায়, ডোনাল্ড ট্রাম্প বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ বাইডেনের দেওয়া ক্ষমার সিদ্ধান্ত বাতিল করার উদ্যোগ নিলেও সাংবিধানিকভাবে বা আইনি নজিরের ভিত্তিতে এর সফলতা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। রাজনৈতিক চাপ বা বিতর্ক তৈরি হলেও, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেওয়া ক্ষমা একটি অত্যন্ত সুসংহত ক্ষমতা, যা সহজেই বাতিল করা যায় না।
সূত্র: সিএনএন
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল