জুলাই আন্দোলনে যাত্রাবাড়ীর কিশোর আবদুল কাইয়ূম আহাদ হত্যা মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক খালেদ হাসান তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। আবেদন মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্ল্যাহর আদালত। গতকাল সকালে ধানমন্ডির বাসা থেকে খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৮ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানাধীন এলাকায় কাজলা পুলিশ বক্সের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান আবদুল কাইয়ূম আহাদ। তার বাবা আলাউদ্দিন এ বছরের ৬ জুলাই ৪৬৭ জনকে এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাতনামা ১ থেকে ২ হাজার জনকে আসামি করে যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন।
জানা গেছে, দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১০ সালে খায়রুল হক শপথ নেন। পরের বছর ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় তিনি অবসরে যান। আপিল বিভাগে থাকাকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় দেন খায়রুল হক। হাই কোর্ট বিভাগে থাকাকালে শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার রায় ও সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী মামলার রায় দিয়েছিলেন খায়রুল হক। ২০১৩ সালে তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা একই পদে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয় সাবেক এই বিচারপতিকে। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে ১৩ আগস্ট তিনি আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছিল না।
বিধিবহির্ভূতভাবে প্লট নেন বিচারপতি খায়রুল : সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নামে বিধিবহির্ভূতভাবে প্লট নেওয়ার অভিযোগ অনুসন্ধানে নথি তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ওই সুবিধা নিয়েছেন তিনি- এমন অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর গতকাল নথি তলবের চিঠি দেয় সংস্থাটি। চিঠিতে অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র জরুরি ভিত্তিতে সরবরাহের জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবকে অনুরোধ করা হয়েছে। দুদক সূত্রে জানা যায়, বরাদ্দকৃত প্লটের বিষয়ে বিদ্যমান নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টির পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কমিশন। দুদকের উপপরিচালক মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে সাত সদস্যদের টিম অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছে। টিমের অপর সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, মুবাশ্বিরা আতিয়া তমা, এসএম রাশেদুল হাসান, একেএম মর্তুজা আলী সাগর, মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ও উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন। এর আগে গত বছর এ বি এম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে বিচারক হিসেবে ‘দুর্নীতি ও বিদ্বেষমূলক’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে বেআইনি রায় দেওয়া ও জাল রায় তৈরির অভিযোগে দণ্ডবিধির ২১৯ ও ৪৬৬ ধারায় শাহবাগ থানায় মামলা হয়।