২০১৮ সালের ভোট জালিয়াতির অভিযোগে সারা দেশের অন্তত ১ হাজার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ওই সময় নির্বাচনের সময় দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের তথ্য চেয়ে গত ১৭ মার্চ নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিবের কাছে একটি চিঠি দেন দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। চিঠিতে তিনি জানান, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারী ও শহিদুল হক, সাবেক র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) ও আইজিপি বেনজীর আহমেদ, সাবেক ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া ও অন্যদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অনিয়মের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় সংঘবদ্ধ চক্রের সহায়তায় অবৈধ আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। দুদকের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে বিভিন্ন তথ্য ও রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৮ সালের শতভাগ ভোট পড়া ২৯৮টি ভোট কেন্দ্রের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা, রেজাল্ট শিট ও ভোট গণনার বিবরণী, ওইসব ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নাম, পদবিসহ বিস্তারিত, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নির্বাচনি এজেন্ট, পোলিং এজেন্টদের বিস্তারিত, ওইসব কেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সেলের দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এরই মধ্যে অনেক তথ্য এসেছে সেগুলো যাচাইবাছাই করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ওই সময় দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ২০১৮ সালের নির্বাচনে তৃণমূল থেকে উচ্চপর্যায়ে যারাই ছিল, সবাইকে নিয়েই অনুসন্ধান চলমান আছে।
এদিকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম, ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পুলিশের অন্তত ৮৬ জন সাবেক এবং বর্তমান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।
দুদক সূত্র জানায়, তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন- সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক এসবি-প্রধান মনিরুল ইসলাম, সাবেক সিআইডি-প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া, অতিরিক্ত আইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য, খন্দকার লুৎফুল কবীর, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক ও হাবিবুর রহমান, চট্টগাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) সাবেক কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় ও ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত আইজি মীর রেজাউল আলম, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ, রংপুর রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি আবদুল বাতেন, রংপুর মহানগর পুলিশের (আরএমপি) সাবেক কমিশনার মনিরুজ্জামান, পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি জয়দেব কুমার ভদ্র, ডিএমপির সিটিটিসি-প্রধান আসাদুজ্জামান। এ ছাড়া পুলিশের ২০ ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন- শাহ মিজান শফিউর রহমান, আনিসুর রহমান, মোল্যা নজরুল ইসলাম, এস এম মোস্তাক আহমেদ, জিহাদুল কবীর, ইলিয়াস শরীফ, চট্টগ্রাম রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি নূরে আলম মিনা, শাহ আবিদ হোসেন, জামিল হাসান, ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নূরুল ইসলাম, রাজশাহী রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি বিপ্লব বিজয় তালুকদার। ২১ ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, প্রবীর কুমার রায়, আ স ম মাহতাব উদ্দিন ও পংকজ চন্দ্র রায়। ২২ ব্যাচের খন্দকার নূরুন্নবী, এস এম মেহেদী হাসান, জায়েদুল আলম ও সঞ্জিত কুমার রায়। ২৪ বাচের সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, প্রলয় কুমার জোয়ারদার, এস এম শফিউল্লাহ, এ বি এম মাসুদ হোসেন, কাজী আশরাফুল আজিম, হায়াতুল ইসলাম খান ও জসিম উদ্দিন মোল্লা। ২৫ ব্যাচের আসাদুজ্জামান, গোলাম মোস্তফা রাসেল, মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন, রাজিব আল মাসুদ ও শাহজাহান।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও তার ঘুষবাণিজ্য সিন্ডিকেটের কয়েক সহযোগীর দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তের জন্য গত বছরের ১৫ আগস্ট পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে দুদক।