খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। এক ছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। দেশের ব্যাংক ব্যবস্থায় গত মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, যা গত ডিসেম্বর শেষে ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকেই শ্রেণিকৃত ঋণ বা খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি ৮ লাখ টাকা। মার্চ শেষে মোট বিতরণ করা ঋণের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ খেলাপি হয়ে গেছে। মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৯২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। তিন মাস আগে তা ছিল ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। গত মার্চ পর্যন্ত রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের মোট ঋণের ৪৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। তিন মাস আগে তা ছিল ৪২ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১৫ দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০ দশমিক ১৬ শতাংশ হয়েছে। গতকাল প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের সময় খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। সেই জায়গা থেকে আজ তা প্রায় ২০ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৪ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অদক্ষ তদারকি ও শিথিল নীতির ফলে এই চিত্র তৈরি হয়েছে। এতদিন ধরে ঋণ পুনঃতফসিল, ভুল নীতিমালার কারণে রাজনৈতিক প্রভাবে অনেক খেলাপিকে নিয়মিত হিসাব দেখানো হয়েছে। তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সেই সুবিধাগুলো স্থগিত হলে বাস্তব চিত্র বেরিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়লেও কমেছে ঋণ বিতরণ। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ সময়ে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মাত্র ৩০ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। ঋণ বিতরণ কমলেও প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। গত ডিসেম্বর শেষে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চ শেষে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা। একই সময়ে বেড়েছে মন্দ ঋণের পরিমাণও। মার্চ শেষে মন্দ ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪২ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। তিন মাস আগে গত ডিসেম্বর শেষে মন্দ ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৯১ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা। তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। যা তৎকালীন বিতরণকৃত ঋণের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।