জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, নির্বাচন হওয়ার আগে দুটি শর্ত পূরণ করতে হবে। তা হলো প্রয়োজনীয় সংস্কার ও ফ্যাসিস্টদের বিচার; তারপর সঠিক নির্বাচন। নির্বাচনের আগে দৃশ্যমান, গ্রহণযোগ্য এবং মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন। সংস্কার প্রক্রিয়ায় আমরা সরকারকে সহায়তা করতে চাই। সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয়। গতকাল দুপুরে লালমনিরহাট কালেক্টরেট মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে আয়োজিত এ জনসভায় সভাপতিত্ব করেন লালমনিরহাট জেলা জামায়াতের আমির আবু তাহের। বক্তব্য দেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মাহবুবার রহমান বেলাল, অধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন, লালমনিরহাট-২ আসনে জামায়াতের এমপি প্রার্থী ফিরোজ হায়দার লাভলু, লালমনিরহাট-১ আসনে প্রার্থী আনোরুল ইসলাম রাজু ও সদর আসনের প্রার্থী হারুন অর রশিদ প্রমুখ। জামায়াত আমির আরও বলেন, ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে কিন্তু ফ্যাসিবাদীরা এখনো রয়েছে। একটি গোষ্ঠী চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত। জনগণ চাঁদাবাজিমুক্ত বাংলাদেশ চায়। আওয়ামী লীগের আমলে হিন্দুরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে। আর এর দায় চাপানো হয়েছে জামায়াতের ওপর। ৫৪ বছরে কোনো সরকার মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। আমরা কে কোন ধর্মের সেটা বড় বিষয় নয়, আমরা সবাই বাংলাদেশি। সব বাংলাদেশিকে নিয়ে আমরা কোরআনের আলোকে নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে চাই। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সেনাবাহিনীকে ধ্বংসের মধ্য দিয়ে তাদের ধ্বংসলীলা শুরু করেছে। আর জামায়াতকে ধ্বংসের মধ্য দিয়ে সে খেলা শেষ করেছে। আওয়ামী লীগ জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু আজ আওয়ামী লীগ মানুষের অন্তর থেকে নিষিদ্ধ হয়েছে। জামায়াত আমির বলেন, ফ্যাসিস্টদের বিচার এমনভাবে হওয়া উচিত, যাতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়। নির্বাচন এমনভাবে পরিচালনা করতে হবে, যাতে কেউ সহজে প্রক্রিয়াটি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে। এ বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে আরও সংলাপ ও আলোচনা প্রয়োজন। ভারত প্রসঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ, আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র। ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক রাখতে চাই। সম্পর্ক কেমন হবে তা ভারতকেই নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের নির্যাতিত ১৮ কোটি মানুষের দাবি, গণহত্যাকারীদের বিচার, ২০২৪-এর শহীদ পরিবারগুলোর পুনর্বাসন, আহত এবং পঙ্গু অসংখ্য ছাত্র, তরুণ, যুবক ও মুক্তিকামী মানুষের সুচিকিৎসা এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে ১৫ বছরের সৃষ্ট জঞ্জালগুলোর মৌলিক সংস্কার সাধন করে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা। শফিকুর রহমান বলেন, হাজার প্রাণের বিনিময়ে, হাজার হাজার মানুষের পঙ্গুত্বের বিনিময়ে, আহত হওয়ার বিনিময়ে দেশে এ পরিবর্তন এসেছে। তাই অবশ্যই সংস্কার সাধন করতে হবে। এ সংস্কার কারা করবে? সংস্কারের প্রধান অংশীজন হলো রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলগুলো যত তাড়াতাড়ি ও আন্তরিকতার সঙ্গে সংস্কারে সহযোগিতা করবে, তত তাড়াতাড়ি নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে।
এদিকে গতকাল বিকালে নীলফামারীর জলঢাকা স্টেডিয়াম মাঠে স্থানীয় জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মানুষ ফ্যাসিস্ট সরকারের মতো আর কোনো নির্বাচন দেখতে চায় না। তিনি আরও বলেন, আমরা চাই দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হোক। এটি আমাদের অধিকার।