দেড় দশক পর পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বসে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। বৈঠকে থমকে পড়া সম্পর্ক এগিয়ে নিতে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। সম্পর্কোন্নয়নে অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধানে জোর দেয় ঢাকা। এসব বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলে ইসলামাবাদ। তবে বৈঠক নিয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্থান পায়নি অমীমাংসিত ইস্যুর আলোচনা। বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর সমাধান ছাড়া দুই দেশের সম্পর্ক টেকসই হবে না। এ ইস্যুগুলোই ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কোন্নয়নে মূল চ্যালেঞ্জ।
গত আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে উদ্যোগ নেয় ইসলামাবাদ। এর অংশ হিসেবে গত ডিসেম্বরে মিসরের কায়রোতে ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে সম্মত হয় ঢাকা-ইসলামাবাদ। গত সপ্তাহে ষষ্ঠ পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিতে ঢাকায় আসেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ। দীর্ঘ দেড় যুগ পর এ বৈঠকে বসে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান।
পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে তিনটি অমীমাংসিত ইস্যু সমাধানে জোর দেয় ঢাকা। এর মধ্যে ছিল- মুক্তিযুদ্ধে নৃশংসতার জন্য প্রকাশ্য ক্ষমা প্রার্থনা, স্বাধীনতা-পূর্ব অভিন্ন সম্পদ থেকে পাওনা সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ফেরত দেওয়া এবং বাংলাদেশে আটকে পড়া ৩ লাখের অধিক পাকিস্তানিকে ফেরত নেওয়া। বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় পাকিস্তান। তবে বৈঠক-পরবর্তী পাকিস্তানের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্থান পায়নি অমীমাংসিত ইস্যুর আলোচনা। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে- বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন দিক, গাজায় ইসরায়েলি হামলার নিন্দা এমনকি জম্মু ও কাশ্মির ‘ভারতের অবৈধ দখলে’ রয়েছে দাবি করে এর সমাধানের মতো ইস্যুর কথা বলা হলেও মুক্তিযুদ্ধে ‘গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়া’ কিংবা ‘বকেয়া অর্থের’ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, অমীমাংসিত ইস্যুগুলো সমাধান খুব জটিল কোনো বিষয় নয়। বরং এতদিনেও কেন এ ইস্যুগুলোর সমাধান হয়নি সেটাই বুঝতে পারছি না। আমার মনে হয়, পাকিস্তান তার অবস্থান থেকে বের হতে চাইছে না। তারা যদি অমীমাংসিত ইস্যুগুলো সমাধান করে ফেলে তাহলে দুই দেশের সম্পর্ক- বিশেষ করে দেশ দুটির মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক দৃঢ় হবে। এই অমীমাংসিত ইস্যুগুলো সমাধান না হওয়ায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমালোচনা ও রাজনীতিকরণ চলতেই থাকবে। এ বিষয়গুলো ঝুলিয়ে রাখলে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক টেকসই হবে না।