সোনালি যুগের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে অন্যতম সফল একজন হলেন মমতাজ আলী। সিনেমার প্রতি মমতাজ আলীর প্রেম জন্মে সেই শৈশবে। একসময় পালিয়ে যান উপমহাদেশের সিনেমার প্রধান তীর্থ বোম্বে শহরে। শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন বেশ কিছু চলচ্চিত্র। এমনও বলা হয়, রাজ কাপুরের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন তিনি। শুধু তাই নয় একসময় বলিউডের প্রখ্যাত নির্মাতা মনমোহন দেশাইয়ের সঙ্গে চলচ্চিত্র পরিচালনার কাজ করেছিলেন তিনি। মমতাজ আলী সেই সব নির্মাতার একজন, যাদের নাম দেখেই দর্শক হলে ছুটে যেতেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, তার হাতে ধরে বাংলা অ্যাকশন সিনেমা নতুন মাত্রা পায়। নায়ক উজ্জলের মারকুটে ক্যারিয়ার নির্মাণে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। মমতাজ আলী নির্মিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ‘রক্তাক্ত বাংলা’ নানা কারণে আলোচিত হয়। এতে অভিনয় করেছিলেন ওপার বাংলার বিখ্যাত নায়ক বিশ্বজিৎ চৌধুরী। মমতাজ আলী ১৯৫৭ সালে ঢাকায় ফিরে আসেন। ঢাকায় এসে প্রথমে এ জে কারদারের বিখ্যাত ‘জাগো হুয়া সাভেরা’ ছবিতে সহকারী হিসেবে কাজ করেন। এরপর লাহোরে ও ঢাকায় অনেক পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেন। ‘আকাশ আর মাটি’সহ কয়েকটি ছবিতে অভিনয়ও করেন। মমতাজ আলী পরিচালিত প্রথম ছবি ‘নতুন নামে ডাকো’ মুক্তি পায় ১৯৬৯ সালে। অন্য ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে নতুন ফুলের গন্ধ, রক্তাক্ত বাংলা, সোনার খেলনা, কে আসল কে নকল, ঈমান, কুদরত, নালিশ, নসীব, উসিলা, নিয়ত, কারণ, বিশাল, নতিজা ও সোহরাব রুস্তম। প্রতিটি ছবিই আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে মমতাজ আলী ও নায়ক উজ্জল জুটি মানেই দর্শকপ্রিয় ছবির জুটি। পরিচালনার পাশাপাশি প্রযোজক ও পরিবেশক হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। মমতাজ আলী মানেই ছিল সুপারস্টার নায়ক-নায়িকাদের নিয়ে বিশাল আয়োজন। তার চলচ্চিত্রের গানগুলোও হতো শ্রুতিমধুর।
যেমন- তোমাকে চাই আমি আরো কাছে, অমন করে যেও নাগো তুমি, ও দাদা ভাই মূর্তি বানাও, কত যে তোমাকে বেসেছি ভালো এবং খোদার ঘরে নালিশ করতে দিলো না আমারে। মমতাজ আলী শারীরিকভাবে চলে গেছেন কিন্তু রয়ে গেছে তার কর্ম ও জীবন। তিনি সমৃদ্ধ করে গেছেন আমাদের চলচ্চিত্রশিল্প। চলচ্চিত্র মাধ্যমের কর্মীরা যত বেশি মমতাজ আলীর মতো নির্মাতা এবং মানুষকে অনুসরণ করবেন, তার কর্ম নিয়ে করবেন চর্চা, তত বেশি সমৃদ্ধ হবে আমাদের চলচ্চিত্রমাধ্যম। সামাজিক-অ্যাকশন ছবির সুপারহিট পরিচালক মমতাজ আলীর জন্ম ১৯৩৭ সালের ১৬ জানুয়ারি ঢাকায়, মারা যান ১৯৯৭ সালের ৮ নভেম্বর।