বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালী জুড়ে টানা বৃষ্টিপাত চলছে। অব্যাহত বৃষ্টিপাতের ফলে তলিয়ে গেছে নিম্মাঞ্চলসহ বিস্তির্ণ এলাকার মাঠের পর মাঠ। তলিয়ে গেছে পৌর এলাকার বিভিন্ন এলাকা। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। শহরের রাস্তাঘাট ছিল প্রায় ফাঁকা। সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষেরা।
এ ছাড়াও জেলাজুড়ে চাষাবাদের জমিতে পানি আর পানি। খেটে খাওয়া মানুষ, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। দোকানপাট খোলা থাকলেও বিক্রি নেই বললেই চলে।
পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক মাহবুবা সূখী জানান, আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ২৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই বৃষ্টিপাতকে অতিভারী বৃষ্টিপাত বলা হয়ে থাকে। আগামী ১২ জুলাই পর্যন্ত এ বৃষ্টি চলমান থাকবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, চলতি বছরে এটাই সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। সমুদ্র বন্দরে ৩ এবং নদী বন্দরে ১ নম্বর সংকেত জারি করা হয়েছে।
শহর ঘুরে দেখা গেছে, অব্যাহত বৃষ্টির কারণে শহরের জেলা আনসার ও ভিডিপি (জেলা কমান্ড্যান্ট অফিস) কার্যালয় মাঠ, জুবীলী স্কুল সড়ক, মহিলা কলেজ রোড, সবুজবাগ, কাজীপাড়া, পুরান বাজার, ফটিকের খেয়াঘাট, একতাসড়ক, গোরস্থান সড়ক, তিতাস সিনেমা সড়ক, মুন্সেফপাড়া, মুসলিমপাড়া, শিমুলবাগ, চকবাজারসহ বেশ কিছু এলাকায় জলবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। তবে নদীতে পানির চাপ কম থাকায় ধীর গতিতে পানি নামছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা সচল না থাকায় শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে বলে মনে করছে বাসিন্দারা। বহু এলাকার বাসা-বড়িতে হাটু পানি জমে ভোগান্ততিতে পড়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা।
ফটিকের খেয়াঘাট এলাকার মো. মনির হোসেন বলেন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধাতা দেখা দেয়। ঘরে হাটু সমান পানি জমে গেছে। রান্না বান্না করা যায় না। ঘর থেকে বেড় হওয়ার সুযোগ নেই। কালিকাপুর এলাকার আলী হোসেন বলেন, তার বসত-ঘরের চারদিকে জুড়ে জলাবদ্ধতা। এক থেকে দেড় ফুট পানি জমার কারনে তার বাসার কোন সদস্য বেড় হতে পারেনি।
সবুজবাগ এলাকার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে ঘরে হাটু সমান পানি জমে আছে। বাসা থেকে বেড় হওয়ার সুযোগ নেই। বৃহত্তর সবুজবাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় শত শত পরিবার এখন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
সবুজবাগ এলাকার দোকানী ফয়সাল আহমেদ বলেন, সারারাত বৃষ্টির পর দিনেও বৃষ্টি থামছে না এতে মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। তাই দোকানে বিক্রি নেই বললেই চলে।
পটুয়াখালী পৌরসভার প্রশাসক মো. জুয়েল রানা বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে শহরের বেশ কিছু এলাকায় জলবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এছাড়া পৌর মহাশশ্মান সংলগ্ন খালের জলকপাটের একটি গেট অকার্যকর ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয় সংলগ্ন একটি খালে বাঁধ দিয়ে কালভার্ট নির্মাণ করার ফলে গোরস্থান ও কলাতলা এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। যে কারণে শহর থেকে নদীতে পানি নামতে পারেনি। এখন খালের ওপর দেয়া বাঁধটি অপসারণ করা হয়েছে এবং অকার্যকর জলকপাটি মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল