ঢাকাই চলচ্চিত্রে শিল্পী তৈরির কারিগর হিসেবে খ্যাত প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা এহতেশাম। তাঁর হাত ধরে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটা নায়িকারা আজও সমান জনপ্রিয়। এহতেশামের আবিষ্কার সেসব নায়িকা এখন কে কোথায়? সে কথাই তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ
শবনম
পুরান ঢাকার নারিন্দার মেয়ে নন্দিতা বসাক ঝর্ণা। ১৯৫৯ সালে চলচ্চিত্রকার এহতেশাম কিশোরী শিল্পী হিসেবে তাঁকে ‘এদেশ তোমার আমার’ চলচ্চিত্রে ব্রেক দেন। এরপর আরও পাঁচটি চলচ্চিত্রে কিশোরী শিল্পীর ভূমিকায় অভিনয় করেন। ১৯৬১ সালে এহতেশাম প্রযোজনা করেন ‘হারানো দিন’। এহতেশামের ভাই আরেক প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা এ ছবিটি পরিচালনা করেন। এতে এহতেশামের দেওয়া নাম ‘শবনম’ পরিচয়ে অভিনয় শুরু করেন ঝর্ণা। নায়িকা হিসেবে এহতেশাম পরিচালিত ‘চান্দা’ (১৯৬২) ঢালিউডে শবনমের স্থায়ী আসন গড়ে দেয়। ১৯৯৯ সালে শবনম সর্বশেষ অভিনয় করেন কাজী হায়াতের ‘আম্মাজান’ চলচ্চিত্রে। বর্তমানে তিনি ধর্মকর্ম আর সংসারের কাজ নিয়ে অবসর সময় কাটাচ্ছেন রাজধানীর বারিধারার বাসায়।
শাবানা
১৯৬২ সালে মাত্র নয় বছর বয়সে এহতেশামের ‘নতুন সুর’ চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে শাবানার অভিনয় শুরু। তখন তাঁর নাম শাবানা ছিল না। রত্না নামেই অভিনয়ে যাত্রা। ১৯৬৭ সালে ১৪ বছর বয়সে এহতেশাম পরিচালিত ‘চকোরী’তে শাবানা নাম ধারণ করে নায়িকা হন তিনি। এ নামটি তাঁকে এহতেশামই দিয়েছেন। এ চলচ্চিত্রটি ব্যবসাসফল হলে শুরু হয় নায়িকা শাবানার অপ্রতিরোধ্য যাত্রা। শাবানা সর্বশেষ অভিনয় করেন ১৯৯৯ সালে প্রয়াত চিত্রনির্মাতা আজিজুর রহমানের ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’ চলচ্চিত্রে। নব্বই দশকের শেষদিকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী হন তিনি এখন সেখানেই কাটছে তাঁর প্রবাস জীবন।
শাবনাজ
১৯৯১ সালে মুক্তি পায় এহতেশাম পরিচালিত ‘চাঁদনী’ চলচ্চিত্রটি। কিশোর প্রেমের গল্পের এই চলচ্চিত্রে এহতেশাম উপহার দেন নতুন মুখ শাবনাজকে। শবনম ও শাবানার মতো এহতেশামের আবিষ্কার শাবনাজও প্রথম অভিনয়েই চলচ্চিত্রে প্রতিষ্ঠা পেয়ে যান। ২০০৭ সালে তিনি সর্বশেষ অভিনয় করেন প্রয়াত আজিজুর রহমানের ‘ডাক্তার বাড়ী’ চলচ্চিত্রে। তিনি বিয়ে করেন চিত্রনায়ক নাঈমকে। দুই কন্যার জননী শাবনাজ এখন ঘর সংসার আর ধর্মকর্ম নিয়েই ব্যস্ত।
শাবনূর
শবনম, শাবানা, শাবনাজের পর এহতেশামের আরেক উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হলেন শাবনূর। ১৯৭৪ সালের ১৯ জুলাই ঢাকায় জন্মগ্রহণকারী শাবনূরের প্রকৃত নাম নূপুর। ১৯৯৩ সালে এহতেশামের দেওয়া শাবনূর নামে তাঁরই পরিচালিত ‘চাঁদনী রাতে’ চলচ্চিত্রে তাঁর অভিনয় শুরু। এরপর ২০১৩ সাল পর্যন্ত অসংখ্য হিট ছবি উপহার দেন তিনি। তাঁর সর্বশেষ অভিনীত ও মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের ‘কিছু আশা কিছু ভালোবাসা’ মুক্তি পায় ২০১৩ সালে। এরপর মাঝেমধ্যে কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করলেও তা আর শেষ হয়নি। সর্বশেষ গত বছর তিনি ‘রঙ্গনা’ নামে একটি ছবিতে অভিনয় শুরু করেছিলেন। কিন্তু কাজ শেষ না করেই আবার অস্ট্রেলিয়ার প্রবাস জীবনে ফিরে যান তিনি। সন্তান আইজানকে নিয়ে সেখানে সংসার আর ব্যবসায় ব্যস্ততা এখন তাঁর।