মুখ থুবড়ে পড়তে বসেছে অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রায় ৬৬ হাজার। নিয়োগ ও পদোন্নতি নীতিমালা অনুযায়ী এসব স্কুলের ৩৫ শতাংশে সরাসরি নিয়োগ ও ৬৫ শতাংশে পদোন্নতিযোগ্য প্রধান শিক্ষক পদ রয়েছে। বর্তমানে সরাসরি নিয়োগ হওয়া প্রধান শিক্ষক রয়েছেন প্রায় ২০ হাজার। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ৩৪ হাজারেরও বেশি প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। কিন্তু মামলাজনিত ও আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে ২০০৯ থেকে পদোন্নতি বন্ধ থাকায় এসব শূন্যপদ পূরণ করা যাচ্ছে না। ২০২৩-এর ডিসেম্বরে ৪৩তম বিসিএস থেকে ২৭৪ জনকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে নন-ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছিল, কিন্তু মামলা জটিলতায় তারাও যোগ দিতে পারেননি। অনিশ্চয়তার হতাশায় দিন কাটছে তাদের। ২০০৯-এ একটি প্রকল্পের শিক্ষকরা চাকরির শুরু থেকেই জ্যেষ্ঠতার জন্য রিট দায়ের করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন আদালত। সেই অবধি সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি বন্ধ। ২০১৭-তে ১৮ হাজার সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক পদে চলতি দায়িত্ব দেয় সরকার। তাদের অনেকে এরই মধ্যে অবসরে চলে গেছেন। এরপর নতুন জাতীয়করণ করা বিদ্যালয়ের ২৮৪ জন সহকারী শিক্ষক তাদের স্কুলে প্রধান শিক্ষকের পদ সংরক্ষণ করার জন্য উচ্চ আদালতে রিট করেন। এ রিটে দফায় দফায় স্থগিতাদেশের কারণে পদোন্নতি আটকে যায়। সব মিলে প্রাথমিক শিক্ষায় হযবরল অবস্থা। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা-ব্যবস্থাপনা, শৃঙ্খলা ও মান এমনিতেই প্রশ্নবিদ্ধ, তার ওপর বর্তমান অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে মানসম্মত শিক্ষা আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ হতোদ্দশা অনভিপ্রেত। এর আশু অবসান জরুরি। যেখানে দেশের লাখ লাখ সাধারণ পরিবারের কোমলমতি শিশুরা প্রাথমিক পাঠ নিতে যায়- সেখানে এমন বিশৃঙ্খল অবস্থা, হতোদ্যম শিক্ষকদের দায়সারা পাঠদান- শিশুদের শিক্ষার প্রাথমিক ভিত্তিই দুর্বল করে দিচ্ছে।
কোনো অজুহাতেই এ অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হওয়া মেনে নেওয়া যায় না। দ্রুত এ জট কাটাতে সংশ্লিষ্ট সব মহলের সর্বোচ্চ তৎপরতা গ্রহণ জরুরি।