পরিবেশ সুরক্ষা করে পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে পশু জবাই করবেন কোরবানিদাতারা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতাকে আল্লাহ ভালোবাসেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইমানের অঙ্গ। পবিত্র কোরআনে পবিত্রতা অর্জনকারী প্রসঙ্গে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদের।’ সুরা বাকারা, আয়াত : ২২২।
কোরবানির পশু কেনার জন্য এক হাট থেকে অন্য হাটে ব্যস্ত সময় পার করছেন আল্লাহর প্রিয় মাহবুব বান্দারা। হাটে পরিবেশ নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়। কোরবানি পশুর কষ্ট হয় এমন স্থানে হাট বসানো অনুচিত। পশুটি যেন দাঁড়াতে ও বসতে পারে এমন ব্যবস্থা করা দরকার। হাটের কারণে পরিবেশ যেন কোনোক্রমে নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখে হাট পরিচালনা করা উচিত। হাটে বর্জ্য অপসারণে অবহেলা করে পরিবেশ নষ্ট না করে সর্বদা পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতা রাখতে হবে। যেন ক্রেতাদের আসতে সুবিধা হয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়ই হাটে সুবিধা পাবেন বলে আশা করি। পরিবেশদূষণ করে হাট বসিয়ে পথচারী, এলাকাবাসী, স্কুল-কলেজের মাঠ নষ্ট করা কিংবা হাটসংলগ্ন বসবাসকারীদের অসুবিধা করা কোনোক্রমেই ঠিক হবে না। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, ‘যার কষ্ট থেকে আশপাশের মানুষ নিরাপদ নয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। বুখারি শরিফ।
হাটের পশু বাড়িতে এলেই শুরু কোরবানির আনন্দের বন্যা। প্রতিবেশীরা সবাই দেখতে আসেন এবারের কোরবানির পশুটিকে। পশুটিকে নিয়ে কোরবানির দিন পর্যন্ত অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয়। কোরবানির দিন পর্যন্ত পশুটিকে এমন জায়গায় রাখতে হবে যাতে নিজ বাড়ির পরিবেশ নষ্ট না হয়। রসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের ঘরের আঙিনাগুলো পরিচ্ছন্ন রাখবে। (তিরমিজি শরিফ)। পরিবেশ সুরক্ষার জন্য সহজে রক্ত, মজ্জা, বিষ্ঠা পরিষ্কার করা যায় এমন স্থানে পশু জবাই দেওয়া উত্তম। কোরবানির পশু কয়েকজনে মিলে নির্দিষ্ট স্থানে জবাই করাটা ভালো। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জায়গায় গোশত কাটতে হবে। কাজ শেষ হলে পানি ও সাবান এবং স্যাভলন দিয়ে জায়গাটিকে পরিষ্কার করে দুর্গন্ধ প্রতিরোধের জন্য চারপাশে ব্লিচিং পাউডার ছিটাতে হবে। অন্তত বাড়ির চারপাশের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও রোগবালাইমুক্ত থাকে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে কোরবানি করা পশুর হাড়, লেজ, কান, মাথার খুলি অবশিষ্টাংশ অবশ্যই খালি জায়গায় একটি গর্ত করে, বর্জ্যগুলো ওই গর্তে ফেলে মাটিচাপা দিতে
হবে। শহরে বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে রেখে তা পরিষ্কার করতে হবে। কিংবা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা সহজেই পরিষ্কার করতে পারে এজন্য তাদের সহযোগিতা করতে হবে। কাউকে মুখের ভাষা ও ব্যবহারের মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া যাবে না। হজরত আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসুল (সা.) কে উত্তম মুসলিম? রসুল (সা.) উত্তর দিলেন, ‘যার হাত ও মুখের অনিষ্ট থেকে অন্যসব মুসলিম নিরাপদ।’ (বুখারি শরিফ)। প্রিয় পাঠক, পরিবেশ রক্ষায় কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কারের ব্যাপারে সচেতন হই। নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি, বর্জ্য ফেলতে এবং রোগব্যাধি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে সামাজিক সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করে কোরবানিদাতাদের উৎসাহিত করি। যে পশু কোরবানি করলাম সেই পশুর বর্জ্য অপসারণে গুরুত্ব না দিয়ে সবকিছুই সরকারের ওপর দায়িত্ব দিয়ে নিজে এড়িয়ে যাওয়াটা উচিত নয়। সম্মিলিতভাবে সবাই মিশেমিশে নিজ এলাকাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি। এলাকায় দুর্গন্ধ ও মশার উপদ্রব এবং বিভিন্ন রোগবালাই সংক্রমণের হাত থেকে নিজেদেরই রক্ষা করতে হবে। আল্লাহর জন্য কোরবানি করে সেই পশুর রক্ত ও বর্জ্য ফেলে পথচারী ও প্রতিবেশীকে কষ্ট দিলে আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া যাবে না। হজরত আবু সায়িদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি হালাল খাদ্য খেয়ে জীবনযাপন করবে, সুন্নত অনুসারে আমল করবে এবং কোনো মানুষ তার দ্বারা কষ্ট পাবে না- সে জান্নাতি হবে।’ (তিরমিজি)।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক