আল্লাহতায়ালা সব মানব জাতির সৃষ্টিকর্তা। মানব জাতিকে তিনি নর ও নারী হিসেবে বিন্যাস করেছেন। ইসলামের দৃষ্টিতে নর-নারী পরস্পর সহযোগী। একজন আরেকজনের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। বরং নর-নারী একে অপরের পরিপূরক। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘আর ইমানদার পুরুষ ও ইমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা সৎ কাজের নির্দেশ দেয় এবং অসৎ কাজের নিষেধ করে।’ (সুরা আত তওবাহ-৭১)।
ইসলাম নর-নারী সবাইকে যথাযথ মর্যাদা প্রদান করেছে। পুরুষের মর্যাদা প্রদানের জন্য নারীর অপমান এবং নারীর সম্মানার্থে পুরুষ নির্যাতনকে ইসলাম সমর্থন করে না। নর-নারী সবার মর্যাদা স্ব-স্ব স্থানে যথাযথভাবে প্রদান করত ইসলাম নারীকে সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করেছে। দিয়েছে নারীদের সব অধিকার সঠিকভাবে। ইসলাম আগমনের আগে গোটা পৃথিবীতে নারীর কোনো মর্যাদা ছিল না। নারীরা ছিল তখন শুধু ভোগ বিলাসের উপকরণ এবং সমাজের লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত ও চরম অবহেলিত। নারী হিসেবে তাদের জন্মগ্রহণ ও বেঁচে থাকার অধিকারও ছিল না। ওই সমাজে জীবন্ত কন্যাসন্তানকে পাথরচাপা দিয়ে হত্যা করা হতো। ইসলাম নারীদের মানুষ হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদা ঘোষণা করেছে। সামাজিক অধিকার প্রবর্তন করেছে। মহান প্রভু ঘোষণা করেছেন, ‘যখন জীবন্ত সমাধিস্থ কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল।’ (সুরা তাকবির : ৮-৯)। ইসলামপূর্ব যুগে নারীদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা হতো। বিবাহের ক্ষেত্রে তাদের মোহর প্রদান করা হতো না। উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে নারীদের দেহব্যবসায় বাধ্য করা হতো। ইসলাম ওইসব বর্বর প্রথা নির্মূল করে নারীদের প্রতি ইনসাফ ও সহমর্মিতার ধারা প্রতিষ্ঠা করেছে। আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেছেন, ‘আর তোমরা তোমাদের যুবতীদের ব্যভিচারে লিপ্ত হতে বাধ্য করবে না।’ (সুরা নুর-৩৩)।
সেই জাহেলি যুগে মাতা-পিতা ও স্বামীর মৃত্যু হলে তাদের সম্পদে নারীদের কোনো অংশ দেওয়া হতো না। ইসলাম মেয়েদের তার মাতা-পিতার সম্পদে, স্ত্রীকে তার স্বামীর সম্পদে, মাকে তার সন্তানের সম্পদে এবং বোনকে তার ভাইয়ের সম্পদে নির্ধারিত অংশ নিশ্চিত করে তাদের মর্যাদা ও অধিকার সমুন্নত করেছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মাতা-পিতা ও নিকটতম আত্মীয়দের পরিত্যক্ত সম্পদে পুরুষের অংশ আছে এবং মাতা-পিতা ও নিকটতম আত্মীয়দের পরিত্যক্ত সম্পদে নারীদের অংশ আছে, তা অল্প হোক বা বেশি হোক।’ (সুরা আন নিসা-৭)।
বিবাহের আগ পর্যন্ত মেয়েদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব বাবার ওপর এবং বিবাহের পর স্ত্রীর সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব ইসলাম অর্পণ করেছে স্বামীর ওপর। দেনমোহর স্ত্রীর পাওনা হিসেবে ইসলাম সাব্যস্ত করে দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে মাতা-পিতার সম্পদে ইসলাম মেয়েদের ছেলেদের তুলনায় অর্ধেক অংশ প্রদান করা ধার্য করে দিয়েছে। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আল্লাহ তোমাদের অসিয়ত করেন, এক ছেলের অংশ দুই কন্যার অংশের সমান।’ (সুরা আন নিসা-১১)। ইসলামের দৃষ্টিতে মেয়েদের যাবতীয় খরচ তাদের অভিভাবকের ওপর। কারও দায়িত্ব গ্রহণ করা নারীদের ওপর বাধ্যতামূলক নয়। প্রতিটি পুরুষকে তার নিজের দায়িত্ব ও স্ত্রী-সন্তানের দায়িত্ব পালন করতে হয়। পালন করতে হয় বোন ও আত্মীয়দের সম্পর্ক রক্ষা করার দায়িত্ব। যাবতীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য ইসলাম পুরুষদের প্রদান করেছে মেয়েদের তুলনায় দ্বিগুণ অংশ। সংসার নির্বাহ পদ্ধতি ও সামাজিকতা সম্পর্কে যাদের সামান্য জ্ঞান আছে তারা অনুধাবন করতে পারবে এ অংশ পুরুষদের জন্য মোটেও বেশি নয়। বরং তা তাদের প্রাপ্য ও ইনসাফভিত্তিক অংশ, সুষম এক নীতিমালা। আজকের সমাজে অধিকাংশ মানুষ ইসলাম প্রদত্ত নারীদের এ অধিকার বাস্তবায়ন করছে না। নারীদের অধিকার এখন মুখরোচক স্লোগানে সীমাবদ্ধ। তাই ইসলাম ঘোষিত নারীদের মর্যাদা ও অধিকার বাস্তবায়নে সবাইকে একান্ত হওয়া বর্তমান সমাজের দাবি। এক যুগে মেয়েদের জন্মটাই অভিশাপ হিসেবে গণ্য করা হতো। বর্তমান যুগের বাস্তব চিত্রও এদিকেই বেগবান হচ্ছে। কোরআনে কারিমে উল্লেখ হয়েছে, ‘আর যখন তাদের কাউকে কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার মুখ কালো হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মানসিক কষ্টে বিষণ্ন্ন হয়।’ (সুরা আন নাহল-৬৮)। নারী জাতি সম্পর্কে ইসলামের সুষম বিধান গোটা বিশ্বের চিন্তা-চেতনাকে বদলে দিয়েছে। রুখে দিয়েছে মা-বোনদের প্রতি অমানবিকতার দাবানল।
লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা