ভোরে যখন লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি বাড়ির আঙ্গিনায় এসে দাঁড়ায়, তখন সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিল নারী-পুরুষসহ অসংখ্য মানুষ। তারা ছোট্ট রাইসার লাশ দেখতে ভিড় করে। কিন্তু লাশ দেখতে না পেয়ে অনেকেই হাউমাউ করে কেঁদেছেন। উপস্থিত নারীদের কান্নায় সকলের মন ভারী হয়ে উঠে। এসময় কেউই তাদের চোখের পানি আটকে রাখতে পারেনি। মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত তৃতীয় শ্রেণির শিশু শিক্ষার্থী রাইসা মনির লাশ শুক্রবার ভোরে তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার বাজড়া গ্রামে আনা হয়।
পরে সকাল ৯টার দিকে গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া ঈদগাহ ময়দানে জানাজা শেষে বাজড়া কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। রাইসার জানাজায় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেয়। শিশু রাইসার মৃত্যুতে শোকে স্তব্দ হয়ে গেছে গ্রামবাসী।
তিন সন্তানের মধ্যে এক সন্তানের মৃত্যুতে শোকে কাতর শাহাবুল-মিম দম্পতি। রাইসা মনির জন্মের দুই বছর আগে তাদের কোলজুড়ে আসে তাদের বড় মেয়ে সিনথিয়া (১৩) এবং সবার ছোট ছেলে রাফসান শেখ (৪)।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, রাইসা মনির মা-বাবার ইচ্ছা ছিল সন্তানদের ভালো স্কুলে পড়ানোর। উচ্চশিক্ষায় সু-শিক্ষিত করে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার। সেই লক্ষ্যে রাইসাকে ভর্তি করেছিলেন উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। রাইসা মনি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তো আর একই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী তার বড় বোন সিনথিয়া।
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য ওবায়দুর রহমান বলেন, রাইসা মনির অকাল মৃত্যুতে পুরো এলাকার মানুষ শোকে বিহ্বল। তার মরদেহ বাড়িতে পৌঁছানোর পর হৃদয়-বিদারক দৃশ্যর অবতারণা হয়। এমন কোনো মানুষ নেই তার জন্য কাঁদেনি।
রাইসা’র বাবা শাহাবুল শেখ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার মেয়েটা বলেছিল, বাবা ছুটির পর তুমি আমাকে নিতে এসো, আমি ছুটির পর স্কুলে গিয়েছি কিন্তু মেয়েকে পাইনি। শেষবারের জন্যও কলিজাটাকে দেখতে পারলাম না। তিনি বলেন, আমার বড় মেয়েটাও ওই স্কুলে পড়ে। সে আর স্কুলে যেতে চাইছে না। সে আমাকে বলে, যদি স্কুলে আবার বিমান ভেঙ্গে পড়ে। তার চোখে মুখে ভয় দেখতে পেয়েছি। আমি ছোট মেয়েকে হারিয়েছি, বড় মেয়েটিকে হারাতে চাই না।
শাহাবুল শেখ বলেন, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের পরদিন ২২ জুলাই ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেন সিআইডির ডিএনএ ল্যাবের সদস্যরা। পরে নমুনাগুলো বিশ্লেষণ করে আমার মেয়ের মরদেহ শনাক্ত করার পর আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল