মধু মাসের মৌসুমের শুরুতে বছরের অন্য সময়ের চেয়ে কদর বাড়ে বাশেঁর ঝুড়ি বা টুকরির। জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝে বিভিন্ন ফলের সমাহার। বিশেষ করে দিনাজপুর অঞ্চল লিচু ও আমের জন্য অন্যতম। তাই ফল পরিবহনে ব্যবহৃত বাশেঁর ঝুড়ি বা টুকরি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে দিনাজপুরের সাওতাল সম্প্রদায়ের মাহালি জনগোষ্ঠীর নারী-পুরুষরা।
আম-লিচু পাকার সঙ্গে বেড়ে যায় ঝুড়ি কেনার চাহিদা। মাহালি পাড়ায় তাই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে ঝুড়ি তৈরির কাজ। যদিও এসব হারাতে বসেছে বিকল্প প্লাস্টিকের ঝুড়ি বা ক্যারেট বাজারে আসায়। তবে সহজে ব্যবহারযোগ্য দাম কম বাশেঁর ঝুড়ি বা টুকরির প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি। তাই দেশ সেরা লিচু, আমসহ ফলের বাজারজাতকরণে এই ঝুড়ি বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে।
দিনাজপুর পৌর এলাকার কসবা আদিবাসী পাড়া, গোপালগঞ্জ আদিবাসি পাড়া, বিরামপুর পৌর এলাকার চাঁদপুর মাহালি পাড়াসহ কয়েক গ্রাম ও ফুলবাড়ীর দৌলতপুর ইউপির জয়নগর গ্রামের মাহালি সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। এখন তাদেরও চলছে মৌসুম। মাহালি সম্প্রদায়ের লোকজন কমবেশি সবাই বাপ-দাদার ঐতিহ্যবাহী পেশা ধরে রেখেছেন।
বাঁশের চটা দিয়ে চাটাই, কুলা, ঝুড়ি, ডালা, চাঙারি, টুকরি, ওড়া, চালুনি, মাছ রাখার খলইসহ নানান জিনিস তৈরি করেন তারা। সাওতাল সম্প্রদায়ের মাহালি জনগোষ্ঠী তৈরি করে এসব খাঁচা বা টুকরি। কসবা আদিবাসী পাড়ার পুষ্প মারান্ডী, অজিত মারান্ডী, জয়নগর মাহালিপাড়ায় স্টেফান সরেন ও তার স্ত্রী মিনা মার্ডি, দাউদ হাসদা, বিরামপুর পৌর এলাকার চাঁদপুর মাহালি পাড়ার কমল হেমরমরা বংশ পরম্পরায় ব্রিটিশ আমল থেকেই এ পেশায় জীবিকা নির্বাহ করছেন।
অজিত মারান্ডীসহ কয়েকজন জানান, তিন ধরনের খাঁচা তৈরি করেন তারা। এক হাজার লিচু ধারণের খাঁচা ১৫০ টাকা, ৫০০ লিচু ধারণের খাঁচা ৬০ টাকা আর তিনশত লিচু ধারণের খাঁচা ৫০ টাকা করে বিক্রি করেন। এখানে ২০টিরও অধিক পরিবার এই বাঁশ শিল্পের উপরে জীবিকা নির্বাহ করে। প্রতিদিন গড়ে ১০টি ছোট বড় খাঁচা তৈরি করতে পারে প্রতিজন কারিগর। খাঁচা তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত বাঁশটি প্রথমে কেটে শুকানো হয়। একদিন শুকানোর পরের দিন তৈরি করা হয় লিচুর খাঁচা বা টুকরি। এখন একটি বাঁশ কিনতে হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। একটি বাঁশ থেকে সর্বোচ্চ ৬-৭টি ঝুড়ি তৈরি হয়। প্রতিটি লিচুর ঝুড়ি বিক্রি হয় ১০০-১৫০ টাকায়।
পুষ্প মারান্ডী, জানান এখন বাঁশের দাম বেশি। বাঁশ কিনে দিনে ৮-১০টি ঝুড়ি তৈরি করতে পারেন। তারা বলেন, একসময় প্রতিযোগিতা করতাম ঝুড়ি তৈরির। কিন্তু এখন সেই অবস্থা নেই। কারণ আমের জন্য প্লাস্টিকের ক্যারেট ব্যবহার করায় শুধুই লিচুর ঝুড়ি তৈরি করছি। ঝুড়ি তৈরির প্রধান উপকরণ বাঁশের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভ কমে গেছে। বাঁশের দাম বাড়লেও ক্রেতারা আগের দামেই ঝুড়ি কিনতে চান এবং কেনেনও।
বিডি প্রতিদিন/এমআই