ঋতু চক্রের পথ পরিক্রমায় এখন চলছে গ্রীষ্মকাল। বৈশাখ জৈষ্ঠ এই দুই মাস গ্রীষ্মের বার্তা বহন করে। এই চক্র পরিক্রমায় বৃহস্পতিবার থেকে মধু মাস জ্যৈষ্ঠের যাত্রা শুরু। বছর ঘুরে আবার এলো বাঙালির ফলের রসনা বিলাসী মধুমাস। তাই এই মাসটি বাঙালির কাছে মধুমাস হিসেবেই পরিচিত। বাহারি ফলের সমারোহে মনে করিয়ে দেয় ফলের নানান মাহাত্ম্যকে। তাই ফলকে বলা হয় মহান সৃষ্টিকর্তার নিয়ামক। রংপুরের সিটি বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে মধু সামকে ঘিরে নানান রসালো ফলের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা।
মধু মাসে বাজারে পাওয়া যাবে আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, জামরুল, আনারস, কলা ছাড়াও এ মাসে মিলবে লটকন, পেয়ারা, বাঙ্গি ইত্যাদি। আম এবং লিচু ইতোমধ্যেই বাজারে চলে এসেছে। কাঁচা আম ৫০/৬০ টাকা কেজি। পাকা আম দেড়শ থেকে দুইশ টাকা কেজি। কিছুটা অপরিপক্ব লিচু একশ বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা থেকে আড়াইশ টাকা।
পেয়ারা ১২০ টাকা কেজি, বেল প্রতিপিছ ৫০/৬০ টাকা, জামরুল প্রতিকেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কলা প্রতি হালি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, আনারস ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যেই পাওয়া যাবে পাকা কাঁঠাল। এটি আমাদের জাতীয় ফল। জাম, জামরুল, পেয়ারা, আনারসও পাওয়া যাবে। কলার ফলনও এই সময় বেশি হয়। তবে এখানেই শেষ নয়, মাসের শেষ দিকে পাওয়া যাবে কামরাঙা, ছফেদা, গাব, আমড়া ইত্যাদি।
কাঁঠাল জাতীয় ফল হলেও এসময় আমের গুরুত্ব কম নয়। নানা জাতের আম এ দেশে পাওয়া যায়। দেশি আম টক-মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকে। রংপুরের বিখ্যাত হাড়িভাঙা, আম্রপালি, গোপাল ভোগ, ক্ষিরসাপাত, ল্যাংড়া, রানীভোগ, ফজলিসহ নানা জাতের মিষ্টি স্বাদের আমের রসে সিক্ত হবে মুখ।
আম এই মাসের ফল হলেও ভাদ্র ও আশ্বিন মাসেও পাওয়া যায়। কিন্তু লিচু খুব স্বল্প সময়ের ফল। বাজারে এর স্থায়ীত্ব থাকে ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ। দেশে সাধারণত চার প্রকার লিচু পাওয়া যায়। যেমন দেশি, বোম্বাই, চায়না এবং বেদানা জাতের। বেদানা জাতের লিচুর দাম সবচেয়ে বেশি। এই লিচু দিনাজপুর এলাকায় বেশি জন্মে। জামও স্বল্প সময়ের ফল। জাম কয়েক প্রকার- বড় জাম, ছোট জাম এবং ক্ষুদে জাম। ছোট জাতের জাম পাওয়া যায় ভাদ্র-আশ্বিন মাসেও পাওয়া যায়।
কাঁঠাল এমন একটি ফল যা কাঁচা ও পাকা দুই অবস্থাতেই খাওয়া যায়। কাঁচা কাঁঠালকে এঁচোর বলা হয়। এই কাঁঠালে তরকারি হয়। কাঁঠালের বিচি অনেকেরই কাছে প্রিয় খাবার। এর বাইরের ছাল গরু, ছাগলের প্রিয় খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বাংলা একাডেমির সহপরিচালক এবং বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবিদ করিম মুন্না জানান, প্রাকৃতিকভাবে গাছে পাকা ফল এখন বাজারে পাওয়া খুবই দুরূহ। ফল আমাদের স্বাস্থ্যের সহায়ক ও রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করলেও এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে বাজারে ফল বিক্রি করছে। যা জনস্বাস্থের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। তাই ফল কেনার আগে আমাদেরকে সর্তক থাকতে হবে। অপর দিকে স্থানীয় প্রশাসনকে অসাধু ফল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে এই মধু মাস এক সময় বেদনার মাস হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল