তিন বছর ধরে বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা। একাধিকবার অনুরোধ করা হলেও ভারতের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানেন না, ভারত কেন আলোচনায় রাজি হচ্ছে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ভারতের শুল্ক বাধা নেই। তবে অশুল্ক বাধা রয়েছে। যেমন অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক, পণ্যের গুণগত মানের সনদ, সীমিত বন্দর অবকাঠামো, স্থল ও সমুদ্র সংযোগের সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি। তিনি আরও বলেন, এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে একাধিক বৈঠক হয়। যার মধ্যে সচিব পর্যায়ের বৈঠক বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তবে গত তিন বছরে সচিবপর্যায়ের বৈঠক হয়নি। ২০২২ সালের ৪ মার্চ নয়াদিল্লিতে সবশেষ বৈঠক হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালে ঢাকায় বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। প্রথা অনুযায়ী ২০২৩ সালের ১৫ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে তিনটি সুবিধাজনক সময় প্রস্তাব করেছিল বাংলাদেশ। ভারত এখনো তার জবাব দেয়নি।
চলতি বছরের ১৬ মার্চ বাণিজ্য সচিবের সভাপতিত্বে বৈঠক করে বাংলাদেশ। যেখানে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির কার্যক্রম পর্যালোচনা করা হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠানো হবে সচিব পর্যায়ের বৈঠকের জন্য, যা ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। একই সঙ্গে আসন্ন বৈঠকে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রুটের বিষয়ে জোর দাবি তোলার সিদ্ধান্তও হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। সচিবপর্যায়ের বৈঠকের জন্য আমরা ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখব। ভারত বাংলাদেশে যা রপ্তানি করে, তার তুলনায় বাংলাদেশ অনেক কম পণ্য ভারতে রপ্তানি করে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ১ হাজার ৪০০ ডলার। প্রতি বছর ভারতের উদ্বৃত্ত বাণিজ্যের পরিমাণ ৯০০ থেকে ১ হাজার কোটি ডলার।
চলতি বছরের ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য তৃতীয় দেশে পাঠানোর জন্য ভারত তাদের স্থলবন্দর এবং আকাশপথের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে। এরপর বাংলাদেশ ভারতের সব স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি নিষিদ্ধ করে। ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের পরপরই বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন দাবি করেন, এতে বাংলাদেশের সমস্যা হবে না। পরে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের কারণে বাংলাদেশের পণ্য পরিবহনের খরচ ২ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। ২০২৪ সালে ভারত থেকে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের তুলা সুতা ভারত থেকে আমদানি করেছিল বাংলাদেশ। একই বছর বাংলাদেশ ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের বেশি পোশাক রপ্তানি করে, যার মধ্যে ১০০ কোটি ডলারের বেশি পণ্য ভারতীয় স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যে উভয় সরকারের উচিত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, বিশেষ করে বাণিজ্য ক্ষেত্রে সম্পর্ক উন্নত করার চেষ্টা করা।