সম্ভাবনার এক বিশাল সম্ভার চট্টগ্রাম বন্দর। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে এ সুযোগ কাজে লাগানো হয়নি। এ বন্দরকে ঘিরে আশার আলো দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে বন্দরের প্রস্তাবিত বে-টার্মিনাল ও লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনালে তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে এসেছে আন্তর্জাতিক বন্দর পরিচালনাকারী তিনটি প্রতিষ্ঠান। তারা টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনা করবে। প্রতিষ্ঠান তিনটির সঙ্গে এ বিষয়ে সরকারের আলাপ-আলোচনা চলছে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে টার্মিনাল দুটি নির্মাণ শেষ করে অপারেশনে নিয়ে যেতে চায় সরকার। এর বাইরে বর্তমানে অপারেশনে থাকা বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালেও (এনসিটি) আন্তর্জাতিক মানের অপারেটর নিয়োগ দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে সরকারের তরফে চিন্তাভাবনা চলছে। বন্দরসংশ্লিষ্টরা জানান, আন্তর্জাতিক মানের অপারেটর এলে বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে। একই সঙ্গে তৈরি হবে কর্মসংস্থানের সুযোগ। এর আগে গত সরকারের আমলে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বন্দরের নতুন নির্মিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) পরিচালনার দায়িত্ব সৌদি আরবভিত্তিক রেড সি গেটওয়েকে দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বন্দরের ইতিহাসে এটিই প্রথম টার্মিনাল যা পরিচালনায় যুক্ত হয় কোনো বিদেশি অপারেটর। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ চট্টগ্রাম সফর করবেন। সফরে তাঁর দেশের প্রধান এই সমুদ্রবন্দর পরিদর্শন করার কথা। প্রধান উপদেষ্টার সফরের ফলে বন্দরে বিদেশি বিনিয়োগ ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করছেন ব্যবহারকারীরা। চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বন্দর উন্নয়নের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়েছে। বন্দর ব্যবহারকারী হিসেবে আমাদের দীর্ঘদিনের চাওয়া বন্দরের প্রয়োজনীয় উন্নয়ন ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা হোক। সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যেতে হলে আরও অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রয়োজন। এ উন্নয়ন বন্দরের একার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই বিশে^র যেসব খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে এসেছে, তাদের সুযোগ দিয়ে দ্রুত বে-টার্মিনালসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ শুরু ও শেষ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে বড় প্রকল্প বে-টার্মিনালে পিএসএ সিঙ্গাপুর ও দুবাইভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ড এক বিলিয়ন করে দুই বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এ ছাড়া প্রস্তাবিত লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনালে নেদারল্যান্ডসের এপিএম টার্মিনালস বিনিয়োগ করবে ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি বছরের মধ্যেই এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হতে পারে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান সক্ষমতা ১ দশমিক ২৯ মিলিয়ন টিইইউএস।
সব বন্দরকে একসঙ্গে অপারেশনে নিতে পারলে তা দাঁড়াবে ৭ দশমিক ৮ মিলিয়ন বা ৭৮ লাখ টিইইউএস। বন্দর নিয়ে সামনে যে চুক্তিগুলো হবে তাতে জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ করা হবে।