আট বছর আগে শুরু হয়েছিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প। এ দীর্ঘ সময়ে কাজ হয়েছে অর্ধেকেরও কম। বর্তমানে নির্মাণকাজ একেবারেই থেমে রয়েছে। বাকি কাজ কবে শেষ হবে তার নিশ্চয়তা নেই। এ অবস্থায় প্রতিদিন সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেল রুটের হাজার হাজার যাত্রীকে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে ৩৭৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ’ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। পরিকল্পনায় ছিল পাঁচটি নতুন স্টেশন ভবন ও প্ল্যাটফর্ম, একটি অফিস কাম স্টেশন ভবন, ১১টি ব্রিজ ও কালভার্ট, চারটি পথচারী সেতু, সীমানা প্রাচীর ও দুটি ওয়াশপিট নির্মাণ। এসবের একটিরও কাজ সম্পন্ন হয়নি। কাজের ধীরগতির কারণে প্রকল্পটির মেয়াদ একাধিকবার বাড়ানো হয়। এর মধ্যে ২০২৩ সালের ১৫ মার্চ চায়না পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন কাজ অসম্পন্ন রেখেই প্রকল্প ত্যাগ করে। সেই সময় পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ছিল মাত্র ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ। যাত্রী ও রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানায়, প্রতিদিন প্রায় ৩০ হাজার যাত্রী নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা আসা যাওয়া করে। দেশের অন্যতম পুরোনো বাণিজ্যকেন্দ্রিক যোগাযোগ মাধ্যম হলেও এ রুটে বাড়েনি ট্রেনের সংখ্যা। স্টেশনের অবকাঠামো, নিরাপত্তা, যাত্রীসেবা সবকিছুতেই রয়েছে চরম অব্যবস্থাপনা। বর্ষাকালে যাত্রীদের ভিজতে হয় বৃষ্টিতে; গ্রীষ্মকালে তীব্র রৌদ্রের তাপে পুড়তে হয়। নেই নারীদের জন্য আলাদা শৌচাগার, বসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনের ভিতর-বাইরে ছড়িয়ে থাকে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। বর্ষায় জলাবদ্ধতা থাকে রেললাইনের বিভিন্ন অংশে। এদিকে প্রায় দুই বছর প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল আবারও নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। জিপিটি-স্ট্যান্ডার্ড জয়েন্ট ভেঞ্চারে ৩১৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকার চুক্তি করা হয়। নতুন চুক্তিতে আগের ঠিকাদারের করা ডুয়েলগেজ লাইনের কাজ, পাশাপাশি বিদ্যমান মিটারগেজ লাইনকেও ডুয়েলগেজে রূপান্তর করতে হবে। ১৮ মাসের মধ্যে কাজগুলো বাস্তবায়ন করার কথা। তবে সরেজমিন কাজের কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।
নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রতিদিন ট্রেনে ঢাকায় গিয়ে অফিস করেন শহরের গলাচিপা এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি কোম্পানির কর্মকর্তা সবুজ সাহা। তিনি বলেন, ট্রেনে যাতায়াত করতে গিয়ে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হতে হয়। বর্ষাকালে বৃষ্টিতে ভিজতে হয়, গ্রীষ্মকালে তীব্র রৌদ্রের তাপে পুড়তে হয়। স্টেশনে বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। ভালো কোনো শৌচাগার নেই।
শহরের কালীরবাজারে নির্মাণাধীন স্টেশন ভবনের নিরাপত্তা কর্মী আলী হোসেন বলেন, অনেকদিন ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। কবে কাজ শুরু হবে জানি না। আগে আমার সঙ্গে চারজন থাকত। এখন আমি একাই থাকি। অরাজনৈতিক সংগঠন আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর সভাপতি হাজী নুরুদ্দিন বলেন, স্টেশনের অবকাঠামো উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতে হবে। স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ডুয়েলগেজ রেললাইনের কাজ নতুন করে দরপত্রের মাধ্যমে শুরু হয়েছে। কিছু কাজ ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিয়মিত তদারকি করছেন। কাজ সম্পন্ন হলে দুর্ভোগ কমে আসবে, যাত্রীসেবার মানও বাড়বে। পাশাপাশি শহরের যানজটও কমে আসবে। রেলপথে নারায়ণগঞ্জের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জেলার যোগাযোগ বাড়বে।