নারায়ণগঞ্জে এক বছরে ২৬টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে। এতে চাকরি হারিয়েছেন ৫ হাজার ৩৪২ শ্রমিক। অর্ডার কমে যাওয়া ও আর্থিক সংকটের কারণে এসব কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, বলছেন মালিকরা। তারা আরও বলছেন, পোশাক খাতে সমস্যা শুরু মহামারি করোনার সময় থেকেই। এটা আরও বাড়িয়ে দেয় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। ফ্যাক্টরিগুলো দুর্বল অবস্থায় ছিল। এরপর ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার, উৎপাদন অপ্রতুলতা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ নানা কারণে পোশাক কারখানাগুলোয় অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া কারখানায় শ্রমিকদের কেউ কেউ উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন অযৌক্তিক দাবি নিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে কারখানায় কাজের ব্যাঘাত ঘটছে।
নারায়ণগঞ্জ শিল্পাঞ্চল পুলিশ সূত্র বলছে, জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১ হাজার ৮৩৪টি পোশাক কারখানা রয়েছে। বিভিন্ন কারণে এক বছরে ২৬টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে। এতে চাকরি হারিয়েছেন ৫ হাজার ৩৪২ জন। তবে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সূত্র বলছে, জেলায় নিবন্ধনকৃত পোশাক কারখানা ১ হাজার ১০টি। এর মধ্যে এক বছরে ৯টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া এএসটি গার্মেন্টের মালিক মো. আতিকুর রহমান বলেন, অর্ডার কমে যাওয়ার পাশাপাশি আর্থিক সংকটের কারণে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি এম এ শাহীন বলেন, অর্ডার কমে যাওয়ার পাশাপাশি কয়েকটি কারখানার মালিকপক্ষ আওয়ামী লীগপন্থি হওয়ায় অব্যবস্থাপনার কারণে বেশ কয়েকটি কারখানা বন্ধ হয়েছে।
শিল্পাঞ্চল পুলিশ-৪, জোনের পরিদর্শক সেলিম বাদশা বলেন, কারখানা বন্ধের সমস্যা দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে। তবে বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি অনেক কারখানা নতুন করে উৎপাদনে গেছে। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক রাজীব চন্দ্র ঘোষ বলেন, বিভিন্ন কারণেই এক বছরে কয়েকটি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে। বিকেএমইএ সহসভাপতি মোরশেদ সারোয়ার সোহেল বলেন, পট পরিবর্তনের কারণেই কিছু পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে, তা নয়। কয়েকটি কারখানা আগে থেকেই বন্ধ হওয়ার উপক্রম ছিল। ফ্যাক্টরিগুলো দুর্বল অবস্থায় ছিল। এর মূল কারণ ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। তিনি আরও বলেন, পোশাক খাতের সমস্যা শুরু হয়েছে মহামারি করোনার সময় থেকেই। ব্যাংকের সুদহার বেড়ে গেল, অর্ডার কমতে থাকা থেকেই কারখানাগুলো দুর্বল হচ্ছিল। পাশাপাশি পট পরিবর্তনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো ছিল না। সব মিলিয়ে আরও নাজুক অবস্থা তৈরি হলে কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু বলেন, বায়ার না পাওয়া, আর্থিক সংকটসহ বিভিন্ন সিন্ডিকেটের কারণে শিল্পকারখানা বন্ধ হয়েছে। কিছু মালিক পতিত সরকারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তারা আত্মগোপনে চলে গেছেন। এসব সমস্যায় কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি শিল্পকারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়েছে।