শ্রাবণ মাসেও পর্যাপ্ত বৃষ্টির দেখা নেই। আবহাওয়ার এমন বৈরীতায় পানির অভাবে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে কৃষকরা পড়েছেন বিপাকে। সোনালি আঁশ পাট যেন গলার ফাঁস হয়ে দেখা দিয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলার ১৩ উপজেলায় ৪ হাজার ৩৭২ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। জেলার কয়েক উপজেলায় বেশি পাট উৎপাদন হয়। এসব এলাকায় নদীনালা, খালবিল, পুকুরসহ জলাশয়গুলোয় পর্যাপ্ত পানি থাকায় কৃষকরা পাট জাগ দিতে পারছেন না। এ কারণে তারা পাট কাটতে বিলম্ব করছেন। পাট জাগ দেওয়া নিয়ে সমস্যা, নায্যমূল্য না পাওয়া, লোকসানের ভয়সহ নানান কারণে পাট চাষ কমে যাচ্ছে এ অঞ্চলে। কৃষকরা বলছেন, পাটের প্রক্রিয়াজাতকরণে বা পাট জাগ দিতে বাদ সেধেছে প্রকৃতি। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় তারা পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। অনেক কৃষক জলাশয়ে পাট জাগ দিয়ে শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিচ্ছেন। অনেকে অন্যের পুকুরে টাকার বিনিময়ে পাট জাগ দিয়েছেন। চাষিরা জানান, প্রতি বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি বিঘায় পাট উৎপাদন হয় ৫-৬ মণ। বাজারে সবচেয়ে ভালো মানের পাটের দাম ২ হাজার ৬ শ থেকে ২ হাজার ৭ শ টাকা প্রতি মণ। লাভ হচ্ছে না কৃষকদের। দিনাজপুর সদরের উলিপুর, মহব্বতপুর, খাড়িপাড়া ও ঘুঘুডাঙ্গাসহ জেলার পুনর্ভবা নদী তীরবর্তী এলাকায় বেশি পাট চাষ হয়। এই এলাকার অধিকাংশ কৃষক খেতের পাট কাটেননি। ফলে জমিতেই গাছ বিবর্ণ হয়ে হলদে রং ধারণ করছে। মহব্বতপুর গ্রামের কৃষক মাহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বৃষ্টির অভাবে জমি শুকিয়ে গেছে। আমন ধানের চারা রোপণ করা যাচ্ছে না। জমি থেকে পাট কাটলে তো খালে-বিলে বা জলাশয়ে পাট জাগ দিতে হয়। কোথাও পানি নেই।
ঘুঘুডাঙ্গা গ্রামের কৃষক শহীদুল্যাহ্ বলেন, অনেক কৃষক শ্যালো পাম্প মেশিনে সেচ দিয়ে পাট পচানোর ব্যবস্থা করছেন। কিন্তু শ্যালোর পানি পর্যাপ্ত না হওয়ায় দুই দিনেই খালের পানি শুকিয়ে যাচ্ছে।
কাহারোলের তারগাঁও ইউপির বুলিয়া গ্রামের পাট চাষি কৃষক অতুল চন্দ্র রায় জানান, ৫০ শতক জমিতে পাট চাষ করে এখন বিপদে আছি। পানির অভাবে পাট জাগ দিতে না পারায়। একই ইউনিয়নের খন্তা গ্রামের আরেক পাট চাষি কৃষক সবুজ চন্দ্র রায় জানান, পাট কেটে আমন ধান লাগাতে হবে। কিন্তু পাট জাগ দেওয়া জায়গা না থাকায় জমির এক কর্নারে পাট জাগ দিচ্ছি শ্যালো মেশিনের পানি সেচ দিয়ে।
কাহারোল উপজেলা কৃষি অফিসার মল্লিকা রানী সেহানবীশ সাংবাদিকদের বলেন, এবার বৃষ্টি কম হওয়ায় পাট জাগ দিতে একটু সমস্যা হচ্ছে চাষিদের। তবে খাল বা ডোবায় কৃষকরা পাট জাগ দিতে পারে। চলতি মৌসুমে পাট চাষাবাদে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬০ হেক্টর। দেশি জাতের পাট ১০ হেক্টর ও তোষা জাতের পাট কাটা হয়েছে ৮৮ হেক্টর।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলার ১৩ উপজেলায় ৪ হাজার ৩৭২ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ হাজার টন। এরই মধ্যে ৬০ ভাগ জমির পাট কাটা হয়েছে। অনেক স্থানে কৃষক জমি থেকে পাট কাটছেন। অনেকে বৃষ্টির আশায় প্রহর গুনছেন।