প্রায় ২৩ লাখ মানুষের বসবাস হবিগঞ্জ জেলায়। তাদের চিকিৎসাসেবার একমাত্র ভরসাস্থল ২৫০ শয্যার জেলা সদর আধুনিক হাসপাতাল। দাঙ্গাপ্রবণ এ জেলায় তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে প্রায়ই হয় সংঘর্ষ। হতাহত হন অনেকে। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের আহত রোগীরা হাসপাতালে এসে পড়েন বিড়ম্বনায়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেন না তারা। ফলে যেতে হয় সিলেট কিংবা ঢাকায়।
এক মাস ধরে হাসপাতালটিতে রয়েছে ওষুধ সংকট। সরকারি বিনামূল্যের ওষুধ না পেয়ে অনেক দরিদ্র রোগী ফিরে যাচ্ছেন খালি হাতে। শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
সরেজমিন সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি ওয়ার্ডে শয্যার অধিক রোগী ভর্তি। কেউ কেউ মেঝেতে নিচ্ছেন চিকিৎসা। সবচেয়ে করুণ দশা শিশু ওয়ার্ডের। এখানে সব সময়ই শয্যার দ্বিগুণেরও বেশি রোগী থাকে। জরুরি বিভাগের খাতায় দেখা যায়- এখানে প্রতিদিন ৩০০-৪০০ রোগী চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে ভর্তি হন অর্ধশতাধিক। আউটডোরে আরও ৩০০ থেকে ৪০০ রোগী সেবা নিয়ে থাকেন। চিকিৎসক সংকট থাকায় কাক্সিক্ষত সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। হাসপাতালের তথ্যমতে, এখানে চিকিৎসক/কর্মকর্তার ৫৭টি পদ রয়েছে। কর্মরত আছেন মাত্র ২৭ জন। কাগজকলমে ২৭ জন হলেও প্রকৃত সংখ্যা আরও কম। কয়েকজন চিকিৎসক রয়েছেন ছুটিতে। দীর্ঘদিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ডা. মেহেদী হাসান। হাসপাতালটিতে বর্তমানে সিনিয়র কনসালট্যান্ট গাইনি পদে একজন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট ইএনটি পদে একজন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট কার্ডিওলজি পদে একজন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট ইউরোলজি পদে একজন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট নেফরোলজি পদে একজন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট সার্জারি একজন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট অর্থো সার্জারি একজন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট শিশু একজন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট চর্ম ও যৌন পদে একটি পদ খালি রয়েছে। জুনিয়র সিনিয়র কনসালট্যান্ট চক্ষু, রেডিওলজিস্ট, অর্থো সার্জারি, শিশু, প্যাথলজি, মেডিসিন, গাইনি, কার্ডিওলজি, মানসিক, গ্যাস্ট্র্রোলজির একটি করে পদ খালি। অ্যানেসথেটিস্ট চারটি পদের মধ্যে একটি ফাঁকা। মেডিকেল অফিসার প্যাথলজিস্ট দুটি, রেজিস্টার একটি, মেডিকেল অফিসার রক্ত একটি ও মেডিকেল অফিসার ১৪টির মধ্যে পাঁটটি পদ শূন্য। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এটা নামেই জেলা সদর হাসপাতাল। এখানে কোনো চিকিৎসাসেবা মেলে না। ভর্তি রোগীদের সব ওষুধ কিনে আনতে হয় বাহির থেকে। চিকিৎসক না থাকায় কাটাছেঁড়ার কাজ করেন ওয়ার্ডবয়রা। ফলে অনেকেই অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন। সদর আধুনিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আমিনুল হক সরকার বলেন, সব সংকট সমাধানে আমরা কাজ করছি। চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করি শিগগিরই এসব সমস্যার সমাধান হবে। তিনি বলেন, আমরা যারা আছি আমাদের সাধ্যমতো চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি।