ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর আজকের দিনে (২৭ জুলাই) নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। পাঁচ সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে নেওয়ার প্রতিবাদে এদিন সারা দেশের দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। অনলাইনে সংবাদ সম্মেলন করে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ, মাহিন সরকার ও সহ-সমন্বয়ক রিফাত রশীদ।
আন্দোলন দমে গেছে ভেবে সাধারণ ছাত্র-জনতা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল। গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখন কর্মসূচি শুরুর পর পাল্টে যায় দৃশ্যপট। সরকারের দমনপীড়নের মধ্যেও নতুন করে প্রাণ ফিরে পায় স্বৈরাচার পতনের আন্দোলন। দেয়ালে দেয়ালে লেখা হতে থাকে ছাত্র-জনতার ওপর চালানো ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদলিপি। ছাত্র-জনতা রাস্তায় কিংবা দেয়ালে লিখতে শুরু করে শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরও দুই সমন্বয়ককে এদিন তুলে নিয়ে যায় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তারা হলেন সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ। এর আগের দিন ২৬ জুলাই রাজধানীর ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও সহ-সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদারকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়।
ওইদিন সংবাদ সম্মেলন থেকে কোটা সংস্কারের জন্য অতিদ্রুত শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে স্বাধীন কমিশন করে এর সুপারিশ অনুযায়ী সংসদে আইন প্রণয়নসহ তিনটি দাবি পূরণে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এসব বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে ২৯ জুলাই থেকে আবারও বাংলা ব্লকেডের চেয়েও বড় কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামার হুঁশিয়ারি দেন আবদুল হান্নান মাসউদ।
হান্নান মাসউদ বলেন, এর আগে আমরা সারা দেশে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছি। কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি দিয়েছি। আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে কঠিন কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে নামব। আমরা পালিয়ে থাকব না। ২৯ জুলাই আমরা আবার রাজপথে নামব।
তিনি আরও বলেন, আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি। একদিকে বলা হচ্ছে, ছাত্ররা নাশকতা করেনি। অন্যদিকে আমাদের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী প্রায় সাড়ে ৩ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে তুলে নেওয়া হয়েছে। সহস্রাধিকের বেশি হামলা করে ভয়ংকর পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্ট্যালিনগ্রাদ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠে যাত্রাবাড়ী এলাকা। এ এলাকায় ছাত্র-জনতা সম্মিলিতভাবে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ২৭ জুলাই যাত্রাবাড়ী এলাকা পরিদর্শনে যান তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এ সময় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের সাবেক উপকমিশনার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন একটি ভিডিও দেখিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, ‘গুলি করে করে লাশ নামানো লাগছে স্যার। গুলি করি, মরে একটা, আহত হয় একটা। একটাই যায় স্যার, বাকিডি যায় না। এইটা হলো স্যার সবচেয়ে বড় আতঙ্কের এবং দুশ্চিন্তার বিষয়।’ ইন্টারনেট চালু হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ৪৩ সেকেন্ডের এই ভিডিও ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয় এবং আন্দোলন বেগবান করতে ভূমিকা রাখে।
জুলাই গণ অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আজ একাধিক কর্মসূচি পালন করবে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান থেকে গড়ে ওঠা বিপ্লবীদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা নেত্রকোনা এবং শেরপুরে পদযাত্রা ও পথসভায় অংশ নেবেন। বিভাগীয় পর্যায়ে গ্রাফিতি অঙ্কন ও গণসংগীত পরিবেশন কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। জুলাই গণ অভ্যুত্থানের ওপর ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।