মাদকে ভাসছে উত্তরাঞ্চল। ঈদ ঘিরে আরও সক্রিয় হয়েছে মাদককারবারিরা। বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে ঢুকছে ফেনসিডিল, ট্যাপেন্টাডল, গাঁজা ও নেশাজাতীয় ইনজেকশন। জয়পুরহাটের উচনা সীমান্তে সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতার না থাকায় এলাকাটি মাদককারবারির জন্য হটস্পট। ওই এলাকার কল্যাণপুর, লকমা, গলাকাটা ব্রিজ, হাটখোলা, শালুয়া, চকবরকতে ভিন্ন উপায়ে চলছে মাদক পারাপার। এসব মাদক বাংলাদেশে এসে তিন ধাপে দেশের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে পড়ছে। দিনাজপুরের হিলির চুড়িপট্টি এলাকায় মাদকের তৎপরতা বেড়েই চলছে। নানা ধরনের নেশা সেবন দিনদিন বাড়ছে এই বন্দর এলাকায়। হিলি সীমান্তবর্তী চুড়িপট্টির পরিত্যক্ত কয়েকটি বাড়িতে চলে মাদকের রমরমা ব্যবসা। এখানে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী-পুরুষ আসেন মাদক কিনতে ও সেবন করতে। মাদক উত্তরের কয়েকটি জেলায় সরবরাহ হয় এই বন্দর থেকে। ঈদ সামনে রেখে মাদক চোরাচালান পেয়েছে নতুন মাত্রা। জানা যায়, প্রতিদিন সন্ধ্যার পর জয়পুরহাটের লকমা ও কল্যাণপুর গ্রামের চিত্র বদলে যায়। সীমান্তঘেঁষা নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় সন্ধ্যার পরই অচেনা মানুষের আনাগোনা বাড়ে। এদের অনেকে কৃষক বা দিনমজুর সেজে আসেন। কেউ সাধারণ পথচারীর মতো চলাফেরা করছেন। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, এরাই মাদক বহনকারী। রাতে দেশি অস্ত্র নিয়ে সীমান্তে ছড়িয়ে পড়ে। সিগন্যাল মিললে মাদকের বস্তা ঘাড়ে নিয়ে আশপাশের গ্রামে রাখে। প্রতি বস্তায় ৫০-১০০ বোতল পর্যন্ত ফেনসিডিল থাকে। এ জন্য নির্দিষ্ট কমিশন পায় তারা। এ চক্রে সীমান্তের একাধিক পয়েন্টে সক্রিয় দুই শতাধিক চোরাকারবারি। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে আসা গাঁজা, ফেনসিডিল ও নেশাজাতীয় বড়ি, ইনজেকশন বগুড়া হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। আবার দেশের অন্য প্রান্ত থেকে ইয়াবার চালান আসে বগুড়ায়। এরপর বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। মাদক সরবরাহে নানা কৌশল অবলম্বন করেন জড়িতরা। বগুড়া শহরের হাড্ডিপট্টিকে মাদকের আখড়া বলা হয়। সেখানকার একজন মাদককারবারি জানান, ৪০ বছর ধরে তিনি মাদক কারবার করছেন। কখনো হিলি কখনো জয়পুরহাটের বিভিন্ন সীমান্ত থেকে ভাসমান ব্যবসায়ী পরিচয়ে মাদক নিয়ে আসেন বগুড়ায়। তিনি আরও বলেন- জয়পুরহাট, নওগাঁ, গাইবান্ধার গোবন্দিগঞ্জ, হিলি হয়ে মাদক প্রবেশ করে বাংলাদেশে।
বগুড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রাজিউর রহমান জানান, ঈদ ঘিরে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মাদককারবারিরা। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। মাদক নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন এলাকায় প্রহরা বাড়ানো হয়েছে। দিনাজপুরের হিলি, জয়পুরহাটের কয়েকটি সীমান্ত, নওগাঁ সীমান্তে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি।