মৌলভীবাজারের হাইল হাওরে কৃষিজমি খনন করে একের পর এক করা হচ্ছে ফিশারি। জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে খামার করায় চাষাবাদে ব্যাঘাত ঘটছে। কয়েক দিন ধরে ১০০টির বেশি এক্সকেভেটর দিয়ে খনন করা হচ্ছে মাটি। ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন স্থানীয় কৃষকরা।
কৃষিজমি (যথাযথ ব্যবহার ও সংরক্ষণ) আইন, ২০২২-এর ৪ ধারা অনুযায়ী জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা দন্ডণীয় অপরাধ। এমন কাজের ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর ও কৃষি অফিস থেকে অনুমোদন নিতে হয়। তাও নেয়নি চক্রটি। কৃষিজমি রক্ষার জন্য স্থানীয় কৃষকরা জেলা প্রশাসকসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন ও প্রতিবাদ সভা করেছেন। প্রশাসন পদক্ষেপ নিলে এমন হতো না ভাষ্য ক্ষতিগ্রস্তদের। জানা যায়, মৌলভীবাজার সদর এবং শ্রীমঙ্গল উপজেলা নিয়ে হাইল হাওর। এ হাওরের আয়তন ১০ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে ২ হাজার একর সরকারি খাস জমি। হাওরে ১৪০০ হেক্টর বিল এবং পানি নিষ্কাশনের জন্য ১৩টি নদী রয়েছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই হাওর থেকে আড়াই লক্ষাধিক মানুষ জীবিকানির্বাহ করেন। স্থানীয় কৃষকরা জানান, প্রথম দিকে কয়েকজন কৃষকের কাছ থেকে কম দামে কিছু জমি কিনেছেন খননে জড়িতরা। এর মধ্যে অনেক সরকারি জায়গাও রয়েছে। অনেক কৃষক জমি বিক্রি করতে না চাইলে স্থানীয় দালাল চক্রের মাধ্যমে জায়গা বিক্রি করতে তাদের বাধ্য করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে স্থানীয় কৃষকরা ১৫ মার্চ সদর উপজেলার ইমাম বাজারে সভা করেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের বাগ্বিতন্ডা হয়। পরদিন মৌলভীবাজার মডেল থানার এসআই জাকির হোসেন রুবেল বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় কৃষকদের আসামি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আবদুল্লাহ ও আফতাব নামে দুজনকে পুলিশ গ্রেপ্তারও করেছে। হাইল হাওরের মোহাম্মদপুর গ্রামের কৃষক নুরুল আমিন, সালেহ আহমদ মুন্না, সিকন্দর মিয়া, আনিকেলীবুদা গ্রামের খায়রুল মিয়া, সুরমান মিয়া ও তাজুল ইসলাম বলেন, যেভাবে জমি খনন চলছে কিছুদিন পর হাওরের নামনিশানা থাকবে না। হাওরের ছোট ছোট গোপাট, ছড়া, খাল, নালা, গরু-মহিষ চলাচলের রাস্তা নিশ্চিহ্ন করে ১০০ এক্সকেভেটর মেশিন দিয়ে রাত-দিন কৃষিজমির মাটি কাটা হচ্ছে। অবৈধভাবে ব্যারিকেড তৈরি করে কৃষিকাজ ও গো-মহিষ চরানোয় বাধা দেওয়া হচ্ছে। দালাল চক্রের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি, হুমকি ও মামলা দিয়ে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে।
কাউয়াদিঘি হাওর রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক খছরু চৌধুরী বলেন, হাওর খনন করে ফিশারি করা সম্পূর্ণ বেআইনি। এগুলো চলছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের স্টাইলে। হাওর ধ্বংসের পরিকল্পনা বন্ধ না হলে আমরা আন্দোলনে নামব। জেলা প্রশাসক ইসরাইল হোসেন বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে খোঁজখবর করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।