লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদী থেকে তোলা হচ্ছে পাথর ও বালু। ধরলা, সানিয়াজান ও সিংগীমারী নদীতে দেদার পাথর-বালু তোলায় সৃষ্টি হচ্ছে বড় বড় গর্ত। এতে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ পরিবর্তনের আশঙ্কা রয়েছে। নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যে। স্থানীয়রা জানান, নদীর তলদেশ খুঁড়ে গভীর থেকে পাথর তোলায় নদীর পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। এসব স্থানে বালুর স্তূপ জমে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নদীর প্রবাহ। সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর মূল অংশ থেকে পাইপের সাহায্যে পানি, পাথর ও বালু একসঙ্গে তোলা হয়। এরপর নৌকায় আলাদা করা হয় পাথর। বালু নদীর পাড়ে ফেলে রাখে। এতে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। এক সময় যেখানে নদী ছিল গভীর, সেখানে এখন বালুর পাহাড়। অবৈধভাবে বালু তোলায় ব্যাহত হচ্ছে মাছের প্রজনন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানির স্তর নেমে যাওয়ায় আশপাশের কূপ ও নলকূপে পানি সংকট দেখা দিতে পারে। পাটগ্রাম আদর্শ কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ শহর উদ্দিন বলেন, ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদীর তলদেশ থেকে পাথর তোলায় মাটির স্বাভাবিক গঠন নষ্ট হচ্ছে। এটি শুধু নদীর জন্য নয়, পুরো অঞ্চলের জন্য মারাত্মক হুমকি। এতে ভূমিকম্পের ঝুঁকি যেমন বাড়ছে, তেমনি কমছে কৃষিজমির উর্বরতা। নদীতীরের বাসিন্দারা জানান, প্রশাসনের অভিযানে ড্রেজার সাময়িক বন্ধ থাকে। পাথর-বালু তোলা স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে প্রয়োজন কঠোর আইনি ব্যবস্থা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, ‘এখানে সবাই টাকা খায়, তাই মেশিন বন্ধ হয় না। আমরা শুধু দেখেই যাচ্ছি, নদী ধ্বংস হচ্ছে।’ পাটগ্রামের ইউএনও জিল্লুর রহমান সম্প্রতি মাইকিং করে ড্রেজার বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। অভিযোগ আছে, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু লোকের কারণে অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে না। জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, ‘ড্রেজার মেশিনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া হয়েছে। আমরা প্রকল্প হাতে নিচ্ছি নদীগুলো পুনরুদ্ধারের। এ কাজে জনগণের সহায়তা প্রয়োজন।’ স্থানীয়রা জানান, নদী আমাদের অস্তিত্বের অংশ। অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন ধীরে ধীরে এই অঞ্চলের নদীগুলো মেরে ফেলছে। প্রশাসন, এলাকাবাসী ও পরিবেশবাদীদের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই ধ্বংসযজ্ঞ ঠেকানো সম্ভব নয়। এখনই সময় সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার।