থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটানের গরু চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশে এনে বিক্রিতে মানি লন্ডারিং হয়েছে প্রায় ১৩৩ কোটি ৫৫ লাখ ৬ হাজার ৩৪৪ টাকা। এই অভিযোগে গত ৪ মার্চ সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সংস্থাটি জানায়, দেশীয় গরু ছাগলকে বিদেশি ও উচ্চ বংশীয় বলে প্রচারণা চালিয়ে কোরবানির বাজার থেকে সাদিক অ্যাগ্রোর অবৈধভাবে আয় করেছেন ১২১ কোটি টাকারও বেশি। কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে গরু এবং মহিষ বাংলাদেশে নিয়ে এসে তা বিক্রি করতেন। আর এভাবেই টাকা পাচার করেছেন ইমরান।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় গত ৩ মার্চ করা মামলায় বলা হয়, ইমরান ও তার ব্যবসায়িক অংশীদার তৌহিদুল আলম জেনিথের মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্থ অর্জন করার তথ্য প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধানে জানা গেছে। প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে অনুমোদনহীন শুধু ব্রাহমা জাতের গরু আমদানি ও সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে বিদেশে প্রায় ৮৬ লাখ টাকা পাচারেরও প্রমাণ পাওয়া গেছে। সিআইডির তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছর ঈদুল আজহার আগে কোটি টাকা দামের ‘বংশ মর্যাদাসম্পন্ন গরু’ ও ছাগলের দাম ১৫ লাখ টাকা চাওয়ার ঘটনায় শুরু হয় সমালোচনা। সেই ছাগল ১২ লাখ টাকায় কেনার চুক্তি করেন মুশফিকুর রহমান ইফাত নামে ১৯ বছর বয়সি এক তরুণ। ১৯ বছরের তরুণ মুশফিকুর রহমান ইফাতের ১২ লাখ টাকায় ছাগল কেনার চুক্তির পর তার বাবা এনবিআর সদস্য মতিউর রহমান ও তার পরিবারের বিপুল সম্পদের তথ্য আসে গণমাধ্যমে। এরপর সাদিক অ্যাগ্রোর নানা অনিয়মের বিষয়েও প্রতিবেদন প্রকাশ হয় সংবাদমাধ্যমে। মামলায় সিআইডির এসআই জোনাঈদ হোসেন উল্লেখ করেন, ইমরান ও তার সহযোগীরা কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে গরু ও মহিষ বাংলাদেশে নিয়ে এসে তা বিক্রি করতেন। এ ছাড়া ভুটান ও নেপাল থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে ছোট আকৃতির ভুট্টি গরু বাংলাদেশে এনে বিক্রি করেন। ইমরান প্রতারণার মাধ্যমে দেশীয় গরু-ছাগলকে বিদেশি ও বংশীয় গরু-ছাগল বলে প্রচার করে উচ্চমূল্যে কোরবানির পশুর হাটে বিক্রি করে প্রায় ১২১ কোটি ৩২ লাখ ১৫ হাজার ১৪৪ টাকা আয় করে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করেছেন। সিআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, অবৈধভাবে অর্জিত মোট ১১ কোটি ৩৬ লাখ ৯১ হাজার ২০০ টাকা ইমরান ও তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান জালালাবাদ মেটাল লিমিটেডের নামে এফডিআর খুলে বিনিয়োগ করে লন্ডারের মাধ্যমে সম্পদে রূপান্তর করেছেন।
এ ছাড়া মোহাম্মদপুরের এলাকায় সরকারি খাল ভরাট ও দখল করে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। বিদেশ থেকে আনা ব্রাহমা জাতের ১৫টি গরু ঢাকা কাস্টমস হাউস আটক করেছিল। পরে সেগুলো সাভারে কৃত্রিম গরু প্রজনন কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল।
পরে প্রজনন কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত দেওয়া হলো, এ গরুগুলো জবাই করে তিনি ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করে দেবেন। কিন্তু এগুলো জবাই না করেই ইমরান জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজ তৈরি করেছেন। এরপর সেগুলো প্রায় ১১ কোটি টাকা মূল্যে বিক্রি করেন। ইমরান প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছেন, মোহাম্মদপুরে সরকারি খাল ভরাট করে সেখানে অবৈধভাবে ব্যবসা করেছেন। তা ছাড়া প্রচুর অস্থাবর সম্পত্তির প্রমাণ পাওয়া গেছে। তার সহযোগী জেনিথ এখনো গ্রেপ্তার হয়নি।